১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির তদন্তেও সক্রিয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজ্যের অন্তত চার জেলায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি। এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামে এক সরকারি আধিকারিকের কোয়ার্টারে, হুগলির চুঁচুড়ায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছেন ইডির আধিকারিকরা। এছাড়াও মুর্শিদাবাদ এবং কলকাতার অদূরে সল্টলেকেও তল্লাশি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
ইডি সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের নওদা গ্রাম পঞ্চায়েতে অ্যাকাউন্ট বিভাগে কাজ করতেন রথীন্দ্রনাথ দে নামে এক ব্যক্তি। তাঁর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির আধিকারিকরা। ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত চালানো হচ্ছে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, ধনেখালি এবং মুর্শিদাবাদের থানায় এই সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করা হয়। এই প্রথম ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির তদন্তে শামিল হল ইডি এবং এই প্রথম এই দুর্নীতির তদন্তে অভিযান চালাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
১০০ দিনের কাজে রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া কেন্দ্র দিচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন ধরেই সরব রাজ্য সরকার। এই নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সপ্তাহে শুক্র এবং শনিবার রেড রোডে ধর্নায় বসেছিলেন মমতা। ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের শ্রমিকদের বকেয়া টাকা রাজ্য সরকার দেবে বলে শনিবার ধর্না মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সঙ্গে ছিলেন অভিষেক। বৈঠক শেষে মমতা বলেছিলেন, 'আমাদের ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দেওয়া উচিত। দ্রুত এই টাকা দেওয়া হোক। আবাস যোজনায় টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মিশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কিছু ভুল হয় যে টাকা বন্ধ করে দেবে, কিন্তু ১৫৫ দল ইতিমধ্যেই বাংলায় গিয়েছেন। যা যা ব্যাখ্যা চেয়েছেন আমাদের অফিসারেরা সব দিয়েছেন। তবুও এখনও কিছু পেলাম না।' বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা আরও বলেছিলেন, '৯ জন সাংসদকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। রাজ্যের বকেয়া মেটানোর আর্জি জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্র এবং রাজ্যের আধিকারিকরা যৌথ বৈঠক করবেন।'
১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের বকেয়ার দাবিতে সরব তৃণমূল। গত বছর অক্টোবরের শুরুতে বকেয়ার দাবিতে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে অভিষেক-সহ তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাক্ষাৎ না করেই বাড়ি চলে যান বলে অভিযোগ করেছিল তৃণমূল। যা ঘিরে দিল্লিতে কৃষি ভবনে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। অবস্থানে বসে পড়েছিলেন অভিষেক-সহ তৃণমূলের সাংসদ,মন্ত্রীরা। শেষে তাঁদের টেনেহিঁচড়ে বার করে দিল্লি পুলিশ। আটকও করা হয় অভিষেকদের। যা ঘিরে সরগরম হয় রাজনীতির ময়দান। লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনেও বকেয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর পরামর্শ ছিল, বকেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করুন মুখ্যমন্ত্রী। ডিসেম্বরে দিল্লি যাওয়ার আগে মমতা বলেছিলেন, '১০০ দিনের কাজে বকেয়া রয়েছে। আমাদের টাকা আটকে রয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের যে ভাগের টাকা, সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের প্রাপ্য টাকা এটা।'