বীরভূমের লাভপুর ব্লকের কুখ্যাত হাতিয়া গ্রামে ফের অশান্তি। নকল সোনার কয়েনের কারবারে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শুক্রবার গভীর রাতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গ্রাম। রাতভর চলে বোমাবাজি, এমনকি শনিবার ভোরেও বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দুই দুষ্কৃতী সাবির শেখ ও আলমগীর শেখের। পুলিশ সূত্রে খবর, বোমা বাঁধতে গিয়েই বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় তারা। গুরুতর জখম আরও তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে বোলপুর মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
জানা গেছে, হাতিয়ায় বহুদিন ধরেই সক্রিয় দুটি গোষ্ঠী নকল সোনার কয়েন তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। কলকাতা ও শহরতলি থেকে ফোন করে ক্রেতাদের বিশ্বাস করানো হতো যে তারা মাটি খুঁড়ে পুরনো সোনার কয়েন পেয়েছে, এবং তা কম দামে বিক্রি করবে। পরে শান্তিনিকেতনে ক্রেতাদের ডেকে নিয়ে প্রতারণা ও লুটপাট চালাত তারা। প্রতারিত ব্যক্তিরা চক্ষুলজ্জায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতেন না, ফলে দিনের পর দিন নির্বিঘ্নে চলেছে এই জালিয়াতি।
পুলিশ সূত্রে খবর, হাতিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে সংঘর্ষ বাধে শেখ মঈনুদ্দিন ও শেখ মনির নামে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে, যারা দীর্ঘদিন ধরেই জাল জাল কয়েন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উভয় পক্ষই ককটেল বোমা ব্যবহার করে একে অপরের উপর হামলা চালায়, যার ফলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।
আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে রেজাউল খানের ভাগ্নে ও তৃণমূল নেতা শেখ বাদলের ছেলে মারা যান। বাকি আহতদের চিকিৎসা চলছে বলে জানানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, 'এই সংঘর্ষের পেছনে দীর্ঘদিনের দখলদারি ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ রয়েছে। তদন্ত চলছে এবং দোষীদের শনাক্ত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালেও এই অঞ্চল থেকে বিপুল অস্ত্র মজুত উদ্ধারের ঘটনা সামনে এসেছিল, এবং পুলিশের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি এলাকায় জাল নোট তৈরির নতুন চক্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় উদ্বেগ বাড়ছে প্রশাসনের এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব ও পুলিশের নরম মনোভাবের জেরেই ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে এই গ্যাং-রাজত্ব। নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।