ভুয়ো ভোটার ইস্যুতে বর্তমানে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। চলছে শাসক-বিরোধী অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। তারই মাঝে বড় খবর। ভারতের ভোটার তালিকায় এবার হদিশ মিলল বাংলাদেশি ভুয়ো ভোটারের। প্রতিবেশী দেশটির এক প্রভাবশালী স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়েও, ওই ব্যক্তির রয়েছে ভারতীয় পাসপোর্ট, আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো সরকারি পরিচয় পত্র। এমনকী এদেশে জমিও রয়েছে বাংলাদেশি ওই নাগরিকের।
ভারতের স্থানীয় ভোটার তালিকা অনুযায়ী ৫৮ বছর বয়সী অজয় কুমার বক্সির ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভার অন্তর্গত রামকৃষ্ণ পল্লী এলাকা। যদিও আধার কার্ডটি রয়েছে জেলারই বনগাঁ থানার অন্তর্গত মতিগঞ্জের নেতাজি মার্কেট ঠিকানায়। পাশাপাশি ওই নেতাজী মার্কেট এলাকায় ৯.২৪ শতক জমিও রয়েছে তার। আবার বাংলাদেশের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য নথি অনুযায়ী সেদেশের খুলনাতে রয়েছে তার স্থায়ী ঠিকানা। অজয় কুমার বক্সির বাবার নাম অধীর কুমার বক্সি। বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা সদরের ৪৭ কে. ডি. এ ঘোষ রোডে। বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত রয়েছে অজয়ের। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় একই নম্বরে ভারত এবং বাংলাদেশে ২টি পাসপোর্টও রয়েছে তার।
এখানেই শেষ নয়, ২০২৩-২৫ বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অজয় কুমার বক্সি। বর্তমানে বাগেরহাট জুয়েলার্সের মালিক অজয় কুমার বক্সি ওই সংগঠনের খুলনা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন। জানা গিয়েছে বাংলাদেশে থাকলেও নিয়মিতভাবে ভারতে যাতায়াত রয়েছে তার। শেষবার গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে কলকাতায় আসে অজয় কুমার বক্সি। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার আইএলএস হাসপাতালে চিকিৎসাও করায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ফের কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে ঢাকায় ফিরে যায় অজয়। রাজ্যে ভুয়া ভোটার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সরব হওয়ার পরই গোটা স্ক্রুটিনিতে নেমেছেন তৃণমূল নেতা কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে অজয় কুমার বক্সির কুকীর্তির বিষয়টি সামনে আনলেন তারই ভাই সঞ্জয় বক্সি।
যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই এই বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সঞ্জয়। দাদা অজয় কুমার বক্সির জমিতে থাকেন বলে নানাভাবে তাঁর পরিবারের উপর মানসিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলেই অভিযোগ ভাইয়ের। দাদা অজয়ের নির্দেশেই প্রতিবেশী সুব্রত মজুমদার তাদেরকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। মূলত এই অভিযোগ নিয়েই দাদা অজয় এবং সুব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সঞ্জয়।
এদিকে বিষয়টি হঠাৎ করে সামনে আসায় ময়দানে নেমে পড়েছে উভয় পক্ষই। এই ঘটনায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, 'বাংলাদেশর বহু মানুষ আছে, যারা ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে জমি কিনে রেখেছে। তাদের ওপারে ভোট আছে, আবার এপারের ভোটার তালিকায় নাম আছে। এরাই হল এখানকার তৃণমূলের ভোট ব্যাংক। পুলিশকে বলব, তারা যেন যথাযথ তদন্ত করে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করে।'
এদিকে বিজেপিকে পাল্টা তোপ দেগে তৃণমূল কংগ্রেসের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, 'এই ভোটগুলো বিজেপি তৈরি করে রেখেছে। আমরা ইতিমধ্যেই তালিকা তৈরি করে জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারকে পাঠিয়েছি। এই ভুয়ো ভোটারগুলি ধরার কারণে বিজেপির মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। এই ভোটগুলো বিজেপিই তৈরি করে রেখেছিল।'
তবে গোটা বিষয়ে প্রশাসনের তরফে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এইরকম একটি মারাত্মক অভিযোগকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। এখন দেখার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ করে প্রশাসন।
প্রতিবেদক- প্রীতম বন্দ্যোপাধ্যায়