scorecardresearch
 

চেনা উচ্ছ্বাস উধাও, দার্জিলিং পাহাড়ে শুধুই শ্মশানের নীরবতা

পাহাড়ের জনজীবন যেমন মুষড়ে পড়েছে, ঠিক তেমনই অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে অনেকটাই।করোনার প্রথম ওয়েভে মোটামুটি কোমর ভেঙে গিয়েছিল পাহাড়ের সিংহভাগ মানুষের। দ্বিতীয় ওয়েভে পাহাড়ের মানুষ কার্যত শয্যাশায়ী। তাঁরা এখন শুধু দিন গুণছেন সুদিন ফেরার।

Advertisement
এ ছবি ফিরবে কবে ? অপেক্ষায় পাহাড় এ ছবি ফিরবে কবে ? অপেক্ষায় পাহাড়
হাইলাইটস
  • অর্থনীতির শিরদাঁড়া ভেঙে পড়েছে
  • পর্যটক ফেরার আশায় পাহাড়
  • গোটা পাহাড় যেন শ্মশান

এ কোন দার্জিলিং পাহাড়!

শুনশান দার্জিলিং ম্যাল চত্বরে সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। দু'চারটে কাক, টানা বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে যাওয়া কয়েকটি পাহাড়ি কুকুর, দার্জিলিং সদর থানার কয়েক জন কনস্টেবল এবং সিভিক ভলেন্টিয়ার ছাড়া আশপাশে ত্রিসীমানায়ও কেউ নেই।

থমথমে পাহাড়ের রাজপথ

যে দিকে চোখ যায়, রাজ ভবনের দিকের রাস্তা কিংবা ঢালু হয়ে নেমে আসা দার্জিলিং মোটর স্ট্যান্ড এর দিকে যাওয়ার প্রধান সড়ক। সব যেমন কেমন থম মেরে রয়েছে। মাঝে মধ্যে নিস্তব্ধতা কাঁপিয়ে ছুটে যাচ্ছে কিছু অ্যাম্বুল্যান্স, কয়েকটি পুলিশের গাড়ি কিংবা সরকারি আধিকারিকদের এসইউভি।

বেঁচে থাকার সাক্ষী শুধু হাসপাতাল

শুধু সদর হাসপাতাল আর ওষুধের দোকানের সামনে কিছুটা জটলা। তবু সমতলের মতো ভিড় নয়। খান কয়েক মাথা প্রয়োজনের চেয়ে কম নড়ছে। কয়েক হাত দূর থেকেও কোনও শব্দ শোনা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র ওষুধের দোকানের সামনে গেলে বোঝা যাচ্ছে এ শহরে এখনও মানুষের বাস রয়েছে। 

গোটা পাহাড়ই এভাবে থমকে

এটা একটা খন্ডচিত্র। কিন্তু দার্জিলিং থেকে কালিম্পং, কার্শিয়ং, মিরিক, ঘুম, টুং, সোনাদা কিংবা রোহিনী। পাহাড়ের সর্বত্র কীভাবে আচমকা থমকে গিয়েছে জনজীবন, তা বোঝাতে এই দৃশ্যই যথেষ্ট। এমনিতে পাহাড়ে ফসল ফলিয়ে কিংবা গাছে ফলিয়ে খাবারের সংখ্যা খুব কম। মাছ-মাংস-ডিম যাই প্রয়োজন হোক না কেন, তার নব্বই শতাংশ আসে সমতলের শিলিগুড়ি থেকে। যদিও অত্যাবশ্যক পণ্যের উপর ছাড় রয়েছে, তবুও স্বাভাবিক অবস্থায় যে গতি থাকে তা হারিয়ে ফেলেছে গোটা পাহাড়।

পাহাড়ের জনজীবনে আচমকা দাঁড়ি

পাহাড়ের জনজীবন যেমন মুষড়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে অনেকটাই।করোনার প্রথম ওয়েভে মোটামুটি কোমর ভেঙে গিয়েছিল পাহাড়ের সিংহভাগ মানুষের।  দ্বিতীয় ওয়েভে পাহাড়ের মানুষ কার্যত শয্যাশায়ী।

Advertisement

মূল মেরুদণ্ড পর্যটনে টান

তাদের মূলত ব্যবসার সবটা পর্যটনের উপরই নির্ভর করে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে গাড়ি চালানো, ঘোড়া ভাড়া দেওয়া, দার্জিলিং চত্বরের ছোটখাটো দোকান, ফুটপাতে পসরা সমস্তই বিক্রি হয় পর্যটকদের কাছে। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই ভাঁটা পড়েছিল পর্যটনে। সংক্রমণের আতঙ্ক এড়িয়ে অনেকেই ভরা মরশুমেও মুখ ফিরিয়েছিলেন পাহাড় থেকে। এবার সরকারিভাবে সমস্ত যাতায়াত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায়, সামান্য দু-চারজন যাও আসছিলেন, সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে অতিক্রম করে, তাঁরাও এখন আর পা রাখতে পারছেন না প্রিয় পাহাড়ে।

বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ

পর্যটন বিশেষজ্ঞ রাজ বসু জানিয়েছেন, সমস্ত জায়গার মতোই পাহাড়েও একইভাবে লকডাউন চলছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পাহাড়ের বিকল্প কোনও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পুষ্টি নেই। হিমালয় অ্যান্ড হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানিয়েছেন, গোটা তরাই-ডুয়ার্স এর সঙ্গে পাহাড় একেবারে ধসে গিয়েছে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে। পাহাড়ের পুরো অর্থনীতিতেই পর্যটনের উপর নির্ভর করে। গাড়ি চালিয়ে, ব্যবসা করে, হোটেল বুক করে, গাইডের কাজ করে, ট্যুর অপারেটর এর ব্যবসা করে পেট চালান সাধারণ মানুষ। সেখান থেকে যে টুকু লাভ আসে, সেই পয়সায় তারা জীবন ধারণ করেন। যা পরিস্থিতি, ছোটখাটো অনেক হোটেল বিক্রি করে দিয়েছেন মালিক। অনেকে গাড়ি বিক্রি করে দিয়ে সেই টাকায় তারা শুধু রেশন জোগাড়ের ব্যবস্থা করছেন। যা অবস্থা, অনেকে আর পর্যটনের ব্যবসায় ফিরতে পারবেন না। যাঁরা ফিরবেন, তাঁরাও কত দিনে ঘাটতি পূরণ করে ফের লাভের মুখ দেখবেন তা এখনই হলফ করে বলা যাচ্ছে না।

 

Advertisement