বৃহস্পতিবার রাজ্যে অষ্টম তথা শেষদফার ভোট। তার আগেই ঝটকা লাগল তৃণমূলের। এবার দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিধায়ক উপেন বিশ্বাস। অবসরপ্রাপ্ত এই আমলা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ইমেল করে তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। এবারের নির্বাচনে ভোটে লড়েননি উপেন বিশ্বাস।
কর্মজীবনে জাঁদরেল IPS অফিসার হিসাবে সুখ্যাতি ছিল উপেন বিশ্বাসের। বিহারে ৯৫০ কোটি টাকার পশু খাদ্য মামলায় তিনিই আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবকে জেলে পাঠিয়েছিলেন। ২০০২ সালে সিবিআই-এর অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন উপেন বিশ্বাস। এরপরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। জানা যায় তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর দাদা-বোনের সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করতেন একদা দুঁদে এই আইপিএস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিককে উপেনদা বলেই সর্বসমক্ষে সম্বোধন করতেন। এহেন উপেন বিশ্বাসের দল ছাড়ার ঘটনায় অনেকেই বিস্মিত। তবে ব্যক্তিগত কারণেই তিনি তৃণমূল ছাড়লেন বলে দাবি করছেন উপেন বিশ্বাস।
২০১১ সালে মমতা মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হন
২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সৈনিক ছিলেন উপেন বিশ্বাস। সেবারের বিধানসভা ভোটে উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন উপেন বিশ্বাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী করেন। যদিও ২০১৬ সালে যেবার তৃণমূলের আসন বাংলায় আরও বাড়ে সেবারি তিনি হেরে যান। উপেন বিশ্বাস হারলেও তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা প্রাপ্ত এসসি-এসটি ফিনান্স কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান করেছিলেন।
CAA নিয়ে মমতার সঙ্গে দূরত্ব?
জানা যাচ্ছে কিছুদিন ধরেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে ভিন্ন অবস্থান ছিল তাঁর। ২০২০-তে করোনা লকডাউনের সময় দলের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখে, সিএএ সম্পর্কে নিজের অবস্থান জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র ইমেল মারফৎ তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে পাঠান বলে জানা যাচ্ছে। যদিও ব্যক্তিগত কারণে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন উপেন বিশ্বাস।
সারদা নিয়েও মুখ খুলেছিলেন উপেন বিশ্বাস
২০১৩ সালে সামনে আসে সারদাকাণ্ড। যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে প্রথম কেলেঙ্কারি। এই নিয়ে নিজের বই ধর্ম অধর্মতে উপেন বিশ্বাস লিখেছিলেন সারদাকাণ্ড ভারতের অন্য যেকোনও তছরূপকেও হার মানাবে। বৃহস্পতিবারই বাংলায় শেষ দফার ভোট, তার ঠিক আগেই তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে তাই কানাঘুষো শুরু হয়েছে। তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন দলের কোর কমিটি থেকেও। এর সঙ্গেই বিজেপিতে তাঁর যোগদানের কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কিনা তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।