
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে ক্যাব চালক।Kolkata Software Engineer Cab Driver: যে হাত একসময় কিবোর্ডে ঝড় তুলত, এখন সেটাই ধরে রাখে স্টিয়ারিং হুইল। সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেও ক্যাব চালান দীপ্তা ঘোষ। শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তব এটাই। জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি.টেক দীপ্তা। তার আগে কলকাতার জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ডিপ্লোমা করেন। তবে প্রথম থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলেন, চাকরির জন্য বাংলার বাইরে যাবেন না।
বাবা মোহিতকুমার ঘোষও ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। চাকরির কারণে জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন রাজ্যের বাইরে। বাবার মতো জীবন চাননি দীপ্তা। বাবার মৃত্যুর পর মাকে ছেড়ে যাওয়ার কথাও ভাবতে পারেননি। যদিও কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ আছে, কিন্তু সেখানে বদলির সম্ভাবনাও প্রবল। তাই নিজে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে মাকে ছেড়ে দূরে যেতে না হয়।

সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে ক্যাব চালক
ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল পুলিশ অফিসার হওয়ার। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছায় সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হন। এরপর চাকরির সন্ধান করতে গিয়ে বুঝতে পারেন, বাংলায় থেকে ভালো সুযোগ পাওয়া কঠিন। অন্যদিকে, মায়ের একাকিত্ব, ছোট বোনের লেখাপড়া— এসব দেখার দায়িত্ব বড় মেয়ে হিসেবে তাঁরই। তাই চাকরির চেষ্টার বদলে অ্যাপ ক্যাব চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। নিজের গাড়ি কিনে রাস্তায় নামেন ক্যাব চালক হিসেবে।
আজ কলকাতার রাস্তায় ‘WB 05-8198’ ক্যাব দেখলে জানবেন, স্টিয়ারিংয়ে রয়েছেন দীপ্তা ঘোষ। জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী এখন শহরের ক্যাব-কন্যা!

রাস্তায় নানা অভিজ্ঞতা, তবে অখুশি নন দীপ্তা
ক্যাব চালাতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় দীপ্তাকে। তবুও তিনি দমে যাননি। যাত্রীদের নিয়ে অবশ্য তাঁর খুব একটা অভিযোগ নেই। বরং তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, পুরুষ যাত্রীরাই বেশি ভালো ব্যবহার করেন। উল্টোদিকে, কিছু মহিলা যাত্রীর ব্যবহারে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে সেই সংখ্যাও খুব বেশি নয়।
মায়ের জন্য, পরিবারের জন্য নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ার ছেড়ে অন্য পথে হাঁটলেও আফসোস নেই দীপ্তার। তিনি মনে করেন, স্বাধীনভাবে কিছু করার মধ্যে আলাদা তৃপ্তি আছে। বাংলা ছেড়ে না গিয়ে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবন চালিয়ে যাওয়াই তাঁর আসল জয়!
সংবাদদাতা- সুজয় ঘোষ