
কাল মকর সংক্রান্তি। পূর্ণ স্নান করতে ইতিমধ্যে ভিড় বাড়ছে মেলা চত্বরে। রাজ্যে করোনা আবহেই এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। এদিকে ক্রিসমাসের পর থেকেই রাজ্যে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই আবহে এবারের গঙ্গাসাগর সুপার স্প্রেডায় হয়ে উঠবে না তো? এমন আশঙ্কাই এখন বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ও আম জনতার মধ্যে। পরিস্থিতি যা তাতে সেই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই মেলামুখী অনেক তীর্থযাত্রীর করোনা ধরা পড়েছে। আবার মেলায় আগত পুন্যার্থীদের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমতি মিলেছে
বর্তমানে রাজ্যের যে করোনা পরিস্থিতি তাতে এই মেলা বন্ধ করতে অবিলম্বে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিক। এই মর্মেই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টে মেলা হওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেন রাজ্যের তরফে অ্যাডোভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। শেষপর্যন্ত গত সপ্তাহেই শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
সংক্রমণ ঠেকাতে দাওয়াই
হাইকোর্ট চলতি সপ্তাহেই জানিয়েছে করোনা টিকার ডবল ডোজ নেওয়ার শংসাপত্র দেখানোর পর পাওয়া যাবে সাগরদ্বীপে প্রবেশের অনুমতি। এছাড়াও মেলায় প্রবেশের ৭২ ঘণ্টা আগে RT PCR কোভিড টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক। পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই পাওয়া যাবে মেলায় প্রবেশের অনুমতি। মেলার জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও গঙ্গাসাগর মেলার জন্য গঠিত কমিটিতে আছেন রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির সদস্য সচিব। এরই মধ্যে গঙ্গাসাগর পরিদর্শন করে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছে হাইকোর্ট নিযুক্ত কমিটি। সদস্যরা তাঁরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে সব বিধি মেনে মেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে কি না। এমন ভাবে সব ব্যবস্থাপনা আছে কি না, যাতে করে করোনা সংক্রমণ যতটা সম্ভব আটকানো যায়।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগ
হাইকোর্টের নির্দেশ এবং করোনাবিধি মানতে বদ্ধপরিকর দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন। নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, পুরো গঙ্গাসাগর দ্বীপকে নোটিফায়েড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সাগরমেলায় আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার দিকটিও নজরে রয়েছে প্রশাসনের। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে চলছে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা। সাগরে নজরদারিতে রয়েছে ভারতীয় নৌ বাহিনীও। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের নির্দেশে গঙ্গাসাগর মেলায় ১২ জন মেডিক্যাল অফিসার পাঠায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে ৫ জন কোভিড আক্রান্ত। নতুন করে ৫ জনকে খুঁজে বের করতে সমস্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মেলা প্রাঙ্গনে যান রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিকে দিন কয়েক আগে বাবুঘাটে গঙ্গসাগর মেলার শিবিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একসঙ্গে বেশি মানুষ যেন সাগরমেলায় না যান।’
বাস্তব চিত্র
এদিকে গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে ভিড় এখন আউট্রাম ঘাট, বাবুঘাটের শিবিরে। ভিনরাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই। ক্যামেরার সামনে চাদর দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা। কারও যুক্তি, গঙ্গাসাগরে পুণ্য করতে যাচ্ছেন। করোনার পাপ তাঁদের স্পর্শ করবে না। এর পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে বাবুঘাটে মাস্ক বিলি করছে পুলিশ। শিবিরে চলছে করোনা পরীক্ষাও। এদিকে ভেসেল করে কচুবেড়িয়া যাওয়ার পথেও একই চিত্র। প্রশাসন সক্রিয় হলেও দূরত্ববিধি মান সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিটি ভেসেলে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ উঠছেন। মেলা প্রাঙ্গন থেকে প্লট নম্বর ৮ জেটিঘাট, কচুবেড়িয়া জেটিঘাট, বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে থিকথিক করছে ভিড়। উধাও হয়েছে দূরত্ববিধি। প্রায় জমায়েত করেই চলছে যাত্রা। কোনওরকম দূরত্ববিধি মানা হচ্ছে না। বাস এবং অন্যান্য গাড়িগুলি পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে না। সূত্রের খবর, এই আবহে মেলার পরিকাঠামো নিয়ে সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট নিযুক্ত কমিটি।