গার্ডেনরিচে একটি বহুতল ভেঙে পড়া ও তার জেরে মৃত্যু নিয়ে রাজ্যরাজনীতি তোলপাড়। ব্যাপক দুর্নীতি ও গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। সব দোষ চাপছে কলকাতা পুরসভার ওপর। প্রশ্ন উঠছে, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ কীকরে এই বাড়িটির অনুমতি দিল। পাশাপাশি এলাকার লোকজনেরও প্রতিবাদ জানান উচিত ছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। এলাকায় যদি কোনও বিপজ্জনক বাড়ি তৈরি হচ্ছে মনে হয়, সেক্ষেত্রে কী করণীয়? জানুন এই প্রতিবেদনে।
কলকাতা পুরসভার নিয়ম
ফিরহাদ হাকিম কলকাতা পুরসভার মেয়র হওয়ার পর 'টক টু মেয়র' চালু করেছিলেন। ১৮০০৫৭২১২১৩ এবং ১৮০০৩৪৫১২১৩ নম্বরে অভিযোগ জানানো যায়। নিয়ম করে সেটা এখনও চলছে। যেখানে তিনি নাগরিকদের অসুবিধার কথা শুনে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও শো ইওর মেয়র নামে একটি নম্বর রয়েছে। যেটায় ছবি হোয়াটসআপ তুলে পাঠান যায়। এছাড়াও কলকাতা পুরসভায় এসে অভিযোগ জানান যায়। লিখিত এবং মৌখিক দু'ভাবেই। এছাড়াও ৮৩৩৩৫৯৯৯১১১ এই চ্যাটবট নম্বরেও সরাসরি অভিযোগ জানান যায়। অভিযোগকারী চাইলে তাঁর পরিচয় গোপনও রাখা হয়। ওই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করলেই ঝটপট দেখবেন মেয়র।
বাড়ির ট্যাক্স, দোকানের লাইসেন্স ফি, পার্কিং সংক্রান্ত প্রশ্ন, জল সরবরাহ, বিজ্ঞাপন এমনকী নতুন ফ্ল্যাট কেনার আগে ওই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করে ক্রেতা জেনে নিতে পারবেন বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পুরসভার অনুমোদন পেয়েছে কি না।
অনলাইনে মিউটেশনের আবেদন করেন অনেকে। কেন সময় লাগছে? তারও উত্তর মিলবে এই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করলে। এর নাম দেওয়া হয়েছে সিটিজেন্স ফিডব্যাক মেকানিজম। কোনও আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে হলে তাঁর অ্যাপয়ন্টমেন্ট নেওয়া যাবে এই চ্যাটবটে। বিভিন্ন কাজে ফিল্ডে ঘুরতে হয় আধিকারিকদের। অনেক বাসিন্দাকেই ঘুরে ফিরে যেতে হয়। সেটা আর হবে না।
পাশাপাশি বুধবার পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরসভা সূত্রে খবর, ওই বৈঠকেই একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলকাতা পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও ছবি তুলে ওই অ্যাপে আপলোড করা হবে। অ্যাপে যে তথ্য ও ছবি থাকবে তা জোগান দিতে হবে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের। ওই তথ্য খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন পুর কর্তৃপক্ষ। দরকার পড়লে ‘স্টপ অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিশ ধরাতে হবে।
অ্যাপটি তৈরি হয়ে গেলে যাবতীয় কাজ হবে তার মাধ্যমেই। সেখানেই বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত নোট ও সেই সংক্রান্ত ছবি দেওয়া হবে। ইঞ্জিনিয়ারেরা নিজ নিজ এলাকা পরিদর্শন করে সেই তথ্য ও ছবি পোস্ট করবেন ওই অ্যাপে। যত দিন না অ্যাপ তৈরি হচ্ছে, এই কাজ করা হবে বিল্ডিং বিভাগের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে, সেখানে নোটও লিখে দিতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের।
রাজ্যের অন্যান্য পৌরসভা বা নিগমগুলির নিয়ম
রাজ্যের অন্য পৌরসভা বা নিগমগুলিরও অভিযোগ জানানোর আলাদা নম্বর থাকে। সেখানে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি নাগরিকরা লিখিত অভিযোগ জানাতে পারেন। ছবি-সহ অভিযোগ বা এলাকাবাসীর সই নিয়ে অভিযোগ জানান যায়। অবৈধ বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে থানায়ও অভিযোগ জানান যায়। পাশাপাশি পুরসভাগুলিতেও অভিযোগ জানানো যায়।
প্রথমেই বিষয়টি এলাকার জনপ্রতিনিধি বা কাউন্সিলরে জানিয়ে রাখা উচিত। তারপরই পুরসভায় লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে। তবে পুরসভাকে জানানোর পরও অনেকসময় প্রতিকার হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে অনেকের। সেক্ষেত্রে লোকাল থানায় জানাতে হবে বা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে এসে বিষয়টি জানিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি, যাঁরা হোয়াটস অ্যাপের মতো বিষয়গুলিতে সড়গড় নন তাঁদের জন্য পৃথক বন্দোবস্ত থাকে বহু পুরসভায়। অনেক পুর অফিসে সমস্যার কথা জানানোর জন্য একটি বাক্স থাকে সেখানেও চিঠি দেওয়া যায়।