
সীমান্তে 'অপেক্ষায়' শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক।Hakimpur Border Crowding: নভেম্বরের সকাল। গ্রাম্য পরিবেশে রীতিমতো শীতের আমেজ। তবে সেই শান্ত স্নিগ্ধতার মাঝেই যেন একটা চাপা গুঞ্জন হাকিমপুরে। বসিরহাট সাবডিভিশনের সীমান্তবর্তী গ্রামে হঠাতই কোথা থেকে অনেক 'অচেনা' লোকজন আসছেন। রাস্তার ধারে ত্রিপল টাঙানো। বড় বড় লাগেজ ব্যাগ, লোটাকম্বল। কোথাও ব্যাগের উপর মাথা রেখে ঘুমোচ্ছেন প্রৌঢ়। মহিলারা এদিক ওদিক বসে। মুড়ি জলে ভিজিয়ে এক শিশুকে খাইয়ে দিচ্ছেন মা। সবার চোখে মুখে যেন এক শূন্যতা, অনিশ্চয়তা ও ভীতি। বসিরহাটের হাকিমপুর ভারত বাংলাদেশ চেকপোস্ট। স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত এই সীমান্তেই 'অপেক্ষায়' শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক। ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরছেন। সম্ভবত SIR এর কারণেই দেশ ছাড়ছেন এদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা।
স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরেই হাকিমপুর চেকপোস্টে ভিড় বাড়ছে। তবে সোমবার সকালে যেন তা হঠাৎ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। সংখ্যাটা প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো হবে। এলাকাবাসীর দাবি, রাত থেকেই বহু নারী, পুরুষ, শিশু সীমান্তের কাছের এই গ্রামে জড়ো হয়েছেন। বড় বড় ব্যাগ, ট্রলি, কম্বল, প্লাস্টিকে মোড়া বাসনপত্র। সংসারের যতটুকু আছে তা নিয়েই সীমান্তে অপেক্ষায় তাঁরা।

এই বিষয়ে এখনও পুলিশ বা BSF এর তরফে কিছু জানানো হয়নি। তবুও এমন বিষয় কি আর চাপা থাকে? সোমবার হাকিমপুরে ঢুকতেই তাই দেখা গেল রাস্তার ধারে, চায়ের দোকানে; সর্বত্রই এই 'আগন্তুক'দের নিয়েই আলোচনা। অনেকের দাবি, কয়েক বছর আগেই সম্ভবত এঁরা অবৈধভাবে ভারতে এসেছিলেন। লেবার মিস্ত্রি, ইটভাটা শ্রমিক বা ভ্যানরিকশা টানার কাজ করতেন। কেউ কলকাতায়, কেউ মুম্বইয়ে, কেউ আবার দিল্লিতে, যেখানে যেমন কাজ মিলেছে সেখানেই থিতু হয়েছিলেন। ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি, রেশন কার্ড, নথি জোগাড়; সবই হয়েছে কোনও অজানা গোপন পথে।

সূত্রের খবর, হাকিমপুরে এই অচেনাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার বাসিন্দা। সংবাদমাধ্যমের সামনে কেউই সেভাবে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে অনেকে নির্ভয়ে সত্যিটা স্বীকারও করলেন। সাতক্ষীরার আব্দুল সরকার বললেন, 'আমরা কলকাতায় থাকতাম। ভারতের নথিও সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে পরিবার নিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছি।' আরেকজন বললেন, 'কয়েক বছর আগে ঘুরপথে ভারতে এসেছিলাম। পরিবার নিয়ে থাকছিলাম। এখন নথি চেক করা হচ্ছে বলে শুনলাম। তাই ফিরে যাচ্ছি।'
আপাতত ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত SIR প্রসেস চলবে। আর সময়ের সঙ্গে এই ভিড় আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন হাকিমপুরের বাসিন্দারা।