২০২২ সালের ২১ জুলাই। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রতিবারের মতোই গত বছরও দলের মহাসচিব হিসেবে ধর্মতলার মঞ্চে সভা পরিচালনা করলেন।
কাট টু, ২০২২ সালের ২২ জুলাই। টাকার স্তূপ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। শিক্ষা দুর্নীতির টাকা। জানা গেল এই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় আসলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী। ভাইরাল হল ২২ জুলাইয়ের সেই দৃশ্য। গোটা দেশ দেখল ট্রাঙ্কে ভর্তি ভর্তি টাকা, সোনা, গয়না অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে বের করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সামনে এল এক প্রেম কাহিনি। যার প্রতীকী নাম 'অপা'। হ্যাঁ, বছর ঘুরছে সেই কলঙ্কিত দিনেরও। শিক্ষা দুর্নীতির ৫০ কোটি টাকার স্তূপ উদ্ধারের সেই দিন।
গত বছরও এই সময়ে তৃণমূলের মহাসচিব, রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। স্বাভাবিকভাবেই একুশের মঞ্চ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব তাঁর হাতেই দিতেন সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলা ১১টার মধ্যেই নাকতলার বাড়ি থেকে সভা মঞ্চে পৌঁছে যেতেন। তাঁর বাড়ির সামনেই ভিড় জমাতেন কর্মী-সমর্থকরা। তারপর হইহই করে সকলে মিলে রওনা দিতেন। আর আজ তাঁর বাড়ির সামনে একেবারে শুনশান। আসলে যাঁর জন্য কর্মীরা যেতেন, তিনিই তো এখন জেলে। নেই তাঁর মহাসচিব পদ, মন্ত্রিত্বও। এবারই প্রথম জেল থেকে একুশে জুলাই কাটাবেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
দেখতে দেখতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কারাবাসের এক বছর হতে চলল। গত বছর ২৩ জুলাই গ্রেফতার হন। তারপর থেকে জেরা-জেলবন্দি দশারই জীবন কাটছে তাঁর। সময়ের সঙ্গে একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে তাঁর নাম।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট থেকে এর সূত্রপাত। অভিনেত্রী-মডেলের অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাটে হানা দেন ইডি-র গোয়েন্দারা। সেখান থেকে বিপুল নোটের হদিশ মেলে। রীতিমতো ব্যাঙ্ককর্মীদের টাকা গোনার মেশিনসহ ডেকে পাঠানো হয়। রাতভর গুনে প্রায় ২১ কোটি টাকা উদ্ধার হয়। গত বছরের ২২ জুলাই, সেই ছবি দেখে চক্ষু চড়়কগাছ হয়ে গেছিল রাজ্যবাসীর।
এরপর অর্পিতার বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাট থেকে মোট ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। ২,০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট থরে থরে সাজানো। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল সেই ছবি। শুধু তাই নয়, মেলে ৪ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার মূল্যের সোনাও। এর মধ্যে ১ কেজি করে ৩টি সোনার বিস্কুট এবং ৫০০ গ্রামে ৬টি গয়না।
ইডির জেরায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, এই টাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনিই নাকি মাঝে মাঝে গিয়ে সেই টাকা রেখে আসতেন। তদন্তের পর ইডি দাবি করে, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের দেওয়া টাকাও সেখানেই রাখা হত। জানা যায়, টেট নিয়োগ দুর্নীতির টাকা ঘুরপথে যেত পার্থর কাছে। আর তা গচ্ছিত রাখা হতো পার্থর এই ফ্ল্যাটে।
সেপ্টেম্বরে পেশ করা ইডির চার্জশিট অনুযায়ী, এসএসসি কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ছাড়াও, বেশ কিছু অবৈধ কার্যকলাপ এবং কেলেঙ্কারির মাধ্যমে এত টাকা তুলেছিলেন পার্থ। আর সেই টাকা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর দুই ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৪৯.৮ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়।