কথায় বলে, রায়গঞ্জের নিঃশ্বাস পড়ে কিষাণগঞ্জে! বিহারের দুই সীমাঞ্চল পূর্ণিয়া ও কিষাণগঞ্জের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক শুধু প্রাচীনই নয়, আত্মিকও। তাই বিহারের সীমাঞ্চলের ভোট সমীকরণ ব্যাখ্যা করতে গেলে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর মালদা ও দার্জিলিং জেলার একেবারে নীচের কিছুটা অংশকে বাদ দেওয়া অসম্ভব।
কিষাণগঞ্জে কিছু ঘটলে তার প্রভাব অবধারিত ভাবে রায়গঞ্জে পড়ে। রায়গঞ্জের মানুষের কিষাণগঞ্জে যাতায়াত এপাড়া-ও পাড়ার মতো। মূলত, কিষাণগঞ্জ ও উত্তর ২৪ পরগনায় বিহারী সংখ্যালঘু মানুষের সংখ্যা প্রচুর। অন্যদিকে পূর্ণিয়ায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। একই সঙ্গে পূর্ণিয়ায় বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যাও বেশি। পূর্ণিয়ায় অনেকে হিন্দি বলতেও পারেন না। তাঁরা নির্ভেজাল বাংলায় কথা বলেন। এই পূর্ণিয়ায় ১৯৭৮-১৯৮৯ টানা ১৮ বছর বিধায়ক সিপিআইএমের অজিত সরকার। তাঁর খুন হওয়ার পরে পূর্ণিয়া সহ এলাকায় ভোটের চিত্র পাল্টায়। একই ভাবে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও উত্তর মালদহে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা বেশি। কিষাণগঞ্জে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা শতাংশের নিরিখে ৬০ ভাগের বেশি।
ঠিক এখানেই ফ্যাক্টর আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। ওয়াইসি-র দল ইতিমধ্যেই উত্তর দিনাজপুর ও কলকাতার কিছু এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। বিহারের সীমাঞ্চলে যে ভাবে AIMIM প্রার্থী দিয়েছে এবং লাগাতার প্রচার করেছে, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটেও যদি AIMIM প্রার্থী দেয়, তা হলে সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণ বদলে যেতে পারে। উত্তর দিনাজপুর, উত্তর মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরের যে সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে যায়, তাতে থাবা বসাতে পারে AIMIM।
কিষাণগঞ্জ ও পূর্ণিয়ায় বড় ফ্যাক্টর আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। বিহারে তাঁর দল AIMIM ২৪টি আসনে ভোটে লড়ছেন। লাগাতার প্রচারও চালিয়েছে সিএএ বিরোধী। কিষাণগঞ্জে ওয়াইসির দলের প্রার্থী মহম্মদ কামরুল হোদা।
২০১৫ সালে বিধানসভা ভোটে পূর্ণিয়ায় জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী বিজয় কুমার খেমকা ৩২ হাজারের বেশি ভোটে। ২০১০ সালেও এই কেন্দ্রে বিজেপির রাজ কেশারি জিতেছিলেন। বলাই বাহুল্য, পূর্ণিয়া বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। আজও এই কেন্দ্রও বিজেপি প্রার্থী বিজয় কুমার খেমকা ২২ হাজারেরও বেশি মার্জিনে এগিয়ে রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত যা ট্রেন্ড, তাতে জিতবেনই।