scorecardresearch
 

'করোনাকালে ভোট হলে দফায় দফায় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক নয় কেন?'প্রশ্ন শিক্ষাবিদদের একাংশের

করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। যার জেরে গোটা দেশের পাশাপাশি রাজ্যের স্কুল-কলেজগুলিও বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে সরকার। ফলে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ।

Advertisement
EDUCATIONIST EDUCATIONIST
হাইলাইটস
  • মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে এবছর?
  • চি্ন্তিত পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা
  • সরকার পরিকল্পনা করে এগোলে পরীক্ষা হওয়া সম্ভব বলে মত শিক্ষাবিদদের একাংশের

করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। যার জেরে গোটা দেশের পাশাপাশি রাজ্যের স্কুল-কলেজগুলিও বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে সরকার। ফলে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি দেখেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু, যদি করোনার সংক্রমণ না কমে, তাহলে কি জীবনের সবথেকে বড় দুই পরীক্ষাতে বসতে পারবে না পরীক্ষার্থীরা? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পবিত্র সরকার, অমল মুখোপাধ্যায়ের মতো শিক্ষাবিদদের মতে, রাজ্য সরকার সদর্থক পদক্ষেপ নিলেই পরীক্ষা হওয়া সম্ভব। 

পরীক্ষা হওয়া সম্ভব!

শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়া সম্ভব। সেজন্য গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকারকে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। 'কোটি কোটি মানুষ ৮ দফায় ভোট দিলে পরীক্ষা কেন হবে না?' এই প্রশ্নের উত্তরে অমলবাবু বলেন, 'বর্তমান রাজ্য সরকার পরিকল্পনাহীনতায় ভুগছে। কী করলে কী হবে এনিয়ে তাঁদের স্পষ্ট কোনও পথ নেই। ফলে পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ছেন। সঠিক পরিকল্পনা পরীক্ষার দরজা খুলে দিতে পারে।' 

একই মত পোষণ করেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও। তিনি বলেন, 'ভোট যেভাবে দফায় দফায় হয়েছে, সেভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও দফায় দফায় করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের সময় কিছুটা বেশি দিলেই হবে। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে পরীক্ষাকেন্দ্রে বসাতে হবে। এতে করোনার সংক্রমণ আটকানো সম্ভব হবে আবার পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাও দিতে পারবেন। তবে এইভাবে রাজ্য সরকার সত্যিই করতে পারলে তা এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।' 

শিক্ষাবিদদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব 

অমল মুখোপাধ্যায় ও পবিত্র সরকার দুই শিক্ষাবিদই পরীক্ষা পরিচালনার জন্য কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেন। তাঁদের বক্তব্য, পরীক্ষা সুচারুভাবে সম্পন্ন করার মনোভাব নিয়ে যদি রাজ্য সরকার এগোতে চায়, তাহলে সর্বপ্রথম একটি কমিটি গঠন প্রয়োজন। যেখানে শিক্ষাবিদ, চিকিৎসকরা থাকবেন। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করবে সেই কমিটি। 

Advertisement

দুই শিক্ষাবিদেরই মত, পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অবিলম্বে রাজ্য সরকারের এই কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। সেই কমিটিতে তাঁদের ডাকা হলে তাঁরাও যাবেন বলে জানিয়েছেন। 

অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন 

করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। তবে এই শিক্ষা ব্যবস্থা কতখানি ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দিহান পবিত্র সরকার ও অমল মুখোপাধ্যায়। অমল মুখোপাধ্যায় যেমন বললেন, রাজ্যজুড়ে অনলাইনে শিক্ষার কথা বলছে রাজ্য সরকার। অথচ এরাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনও ইন্টারনেট পরিষেবা সেভাবে সহজলভ্য নয়। দিন-আনা দিন খাওয়া পরিবারের পড়ুয়াদের পক্ষে ল্যাপটপ বা মোবাইল কেনাও সবসময় সম্ভব হয়ে উঠছে না। এতে তাদের পড়াশোনা বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়ছে। এনিয়ে সরকার কেন ভাবছে না? অমলবাবুর সাফ কথা, 'আমাদের দুর্ভাগ্য হল, কেন্দ্র হোক বা রাজ্য দুই সরকারই সবসময় ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবে পরিকল্পনা ঠিক করে। সুদূরপ্রসারী ভাবনা কারও নেই। এর কুফল ভোগ করতে হয় রাজ্যের সাধারণ মানুষকে। শিক্ষাক্ষেত্রেও সেটা হচ্ছে।' 

এই  নিয়ে পবিত্র সরকারের বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের। রাজ্য সরকার ট্যাব দিয়েছে, এটা সত্যি। তবে সেটা সবাইকে নয়। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে সরকারের কাজ করা উচিত। কীভাবে পরিকাঠামো উন্নত করা যায়, কীভাবে অনলাইন পঠন পাঠনকে আরও উন্নত করা যায়, তা নিয়ে ভাবার সময় চলে এসেছে। 

তাঁর কথায়, 'ছেলে-মেয়েরা যাতে ট্যাব বা স্মার্টফোন  নিয়ে বসে শিক্ষা নিতে পারে সেই প্রশিক্ষণ তাদের দেওয়া দরকার। তার আগে শিক্ষকদেরও এই প্রযুক্তি নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।' 

সুদূরপ্রসারী ফল

পবিত্র সরকার ও অমল মুখোপাধ্যায় এই দুই শিক্ষাবিদই মনে করেন, পরীক্ষা দিনের পর দিন বন্ধ থাকলে তার ফল পড়ুয়াদেরই ভবিষ্যতে ভোগ করতে হবে। অমলবাবু বলেন, 'রাজ্য়ে এমনিতেই কর্মসংস্থান নেই। বেকারত্ব বাড়ছে। পরীক্ষা ব্যবস্থা এভাবে বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলে শিক্ষার্থীদের মান সঠিকভাবে নির্ধারিত হবে না। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে চলে যাবে।' 

পবিত্রবাবু বলেন, 'পরীক্ষা না হলে লেখা-পড়ার অভ্যেস ক্রমশ কমতে শুরু করবে পরীক্ষার্থীদের। তাদের বই পড়ার অভ্যাস চলে যাবে। এখনও গোটা বিশ্বে বইকেই শিক্ষা গ্রহণের সবথেকে উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। অনলাইনে শিক্ষা চালু হওয়াতে বইয়ের প্রতি ঝোঁক পড়ুয়াদের কমেছে। তাই সরকারের এই দিকটাতেও খেয়াল রাখা দরকার। অনলাইনে লেখা পড়া হলেও বই পড়া ও হাতে লেখার প্রতি পড়ুয়াদের যাতে আগ্রহ না কমে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এগোতে হবে সরকারকে।'

Advertisement