ঝাড়গ্রামে একটি গর্ভবতী হাতিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার মর্মান্তিক ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই ঘটনার ভিডিও দেখে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলিব্রিটি সকলেই ক্ষোভে ফুঁসছেন।
গত বৃহস্পতিবার, ঝাড়গ্রাম শহরে পাঁচটি হাতির একটি দল প্রবেশ করে, যার মধ্যে একটি গর্ভবতী মহিলা হাতি ছিল। এই ঘটনার পর হাতির আক্রমণে একজন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, স্থানীয় প্রশাসন এবং বন দফতর হাতিগুলিকে জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করে। তবে, গ্রামবাসীদের ক্ষোভে হাতির দলটির রাস্তা আটকে যায় এবং একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এরপর, হাতির দলটি গ্রাম থেকে বের হয়ে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের মধ্যে ঢুকে পড়ে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন যে, বন দফতর দ্বারা সংগঠিত হুলা পার্টির সদস্যরা হাতিটিকে আক্রমণ করে। হাতিটির উপর জ্বলন্ত লোহা দিয়ে আঘাত করা হয়, যার ফলে হাতিটি গুরুতর আহত হয় এবং পরে পুড়ে মারা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, হাতিটি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করছে এবং শেষে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বহু সেলিব্রিটিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়, যিনি ইতিপূর্বে পশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে "পারিয়া" নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন, ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, "বনমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় একটি গর্ভবতী হাতি খুন হয়েছে, এবং সবাই চুপ করে আছে।" অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও ফেসবুকে তার ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, "আমরা কি ধ্বংসের পথে যাচ্ছি? আমি পশুদের প্রতি এমন সহিংসতা ও আগ্রাসন সহ্য করতে পারি না।"
স্থানীয় গ্রামবাসীরা বন দফতরের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেছেন যে, যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়ে হুলা পার্টি তৈরি করা হচ্ছে, যার ফলেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। তারা আরও জানান, গত ১৫ আগস্ট, রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার বাড়ির সামনে চারটি হাতি চলে আসে, যার মধ্যে দুটি ছিল শাবক। হাতির হানায় একজনের মৃত্যু হলে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
ঝাড়গ্রামের এই ঘটনাটি দেশজুড়ে পুরনো আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে, যেখানে তামিলনাড়ুতে একটি গর্ভবতী হাতিকে আনারসের ভেতরে পটকা ভরে খাওয়ানো হয়েছিল, যার ফলে মুখ ও পেটে বিস্ফোরণ হয়ে তার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার মতোই, ঝাড়গ্রামের ঘটনাও এখন দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় তুলেছে।
এই ঘটনার পর তিনটি হাতিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের ফেরার আগে আরও এক গ্রামবাসীকে পিষে মারার ঘটনা ঘটে। বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা এই ঘটনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে বন দফতর জানিয়েছে যে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঝাড়গ্রামের এই মর্মান্তিক ঘটনা মানুষের মধ্যে আবারও পশুদের প্রতি সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতার প্রশ্ন তুলেছে। প্রশাসনের ভূমিকা এবং বন দফতরের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।