লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতিতে নয়া চমক। কংগ্রেস ছাড়লেন আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। বুধবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক গুলাম আহমেদকে চিঠি দিয়ে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন কৌস্তভ। bangla.aajtak.in-কে ফোনে কৌস্তভ কংগ্রেস ত্যাগের কথা নিশ্চিত করেছেন। তা হলে কি এ বার বিজেপিতে যোগ দেবেন? এই নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন আইনজীবী নেতা।
কংগ্রেস ছাড়লেন কেন কৌস্তভ?
কংগ্রেস-ত্যাগ প্রসঙ্গে bangla.aajtak.in-এ কৌস্তভ বলেন, 'কংগ্রেস ছেড়েছি। কেন ছাড়লাম, তা ইস্তফাপত্রে স্পষ্ট ভাবে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। তৃণমূলকে দল এখানে রাজ্য সংগঠন বলে মনে করে। নিজের আত্মমর্যাদার সঙ্গে আপস করা যায় না।' বিজেপিতে যোগ দেবেন? কৌস্তভের জবাব, 'পরবর্তী কী করছি, দেখতে পাবেন খুব শীঘ্রই।'
দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেসের সঙ্গ কৌস্তভের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। কৌস্তভ যে কংগ্রেস ছাড়বেন, তার আভাসও পাওয়া গিয়েছিল কিছু ঘটনায়। বর্ষশেষের দিন কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছেয়ে গিয়েছিল 'বাংলায় বিকল্প রাজনীতি'পোস্টার। পোস্টার প্রকাশ্যে আসার কিছু সময় পরই এই নিয়ে জল্পনা বাড়িয়ে দেন কংগ্রেসে 'কোণঠাসা' আইনজীবী কৌস্তভ। ফেসবুক পোস্টে লিখছিলেন, 'বাংলার ভবিতব্য, বিকল্প রাজনীতি'। কৌস্তভের এই ফেসবুক পোস্ট এবং পোস্টার ঘিরে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছিল রাজনীতির অলিন্দে। বস্তুত, অতীতেও এই 'বিকল্প রাজনীতি'র কথা শোনা গিয়েছিল কৌস্তভ-কণ্ঠে। এই চর্চার মধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যও জল্পনা বাড়ায়। এক সংবাদমাধ্যমে এই পোস্টার প্রসঙ্গে কৌস্তভ বলেছিলেন, 'গত কয়েক মাস ধরেই এই কথা বলছি। আমি মনে করি, বাংলায় বিরোধী রাজনীতির পরিসরে শূন্যতা রয়েছে। কোনও বিরোধী দল সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তাই বিকল্প রাজনীতিই ভবিতব্য।' একই সঙ্গে কংগ্রেসের আইনজীবী নেতার বক্তব্য ছিল, 'বারংবার বিকল্প রাজনীতির কথা বলেছি। এই কথা যদি কোনও সমষ্টিকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে, তা হলে ভাগ্যবান বলে মনে করছি।'
গত বছর মার্চ মাসে হুমকি এবং অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে কৌস্তভকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ।যা ঘিরে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই ঘটনার পর যত দিন গড়িয়েছে, ততই কৌস্তুভকে ঘিরে আলোচনা বেড়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। এমনকী, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মিটিং-মিছিলে হাঁটতেও দেখা গিয়েছে কৌস্তভকে। শুভেন্দু যে তাঁর কাছে 'অচ্ছুত' নন, সে কথাও মুখ ফুটে বলেছেন কৌস্তভ। অতীতে বলেছিলেন, 'বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। বিজেপি থেকে শুভেন্দু সবটা করতে পারছেন না। এজন্য একটি বিকল্প রাজনীতি প্রয়োজন।' সেই 'বিকল্প রাজনীতি'র পোস্টার ঘিরেই বছর শেষের দিনে নয়া জল্পনা ছড়ায়। তার কয়েক মাসের মধ্যেই কৌস্তভের কংগ্রেস-ত্যাগ এই পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করল।
কৌস্তভ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেছিলেন, 'কৌস্তভ কংগ্রেসে থেকে কংগ্রেসকে লাইনে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারবেন না। কারণ কংগ্রেসের মাথারা চোর মমতা, চোর ভাইপোর সঙ্গে রয়েছে। তাই পারবেন না। ভাই কৌস্তভকে বলব, লোকসভা ভোট পর্যন্ত দেখতে থাকুন। অগলি বার মোদীজি আবার। মোদীজি ৪০০ সিট নিয়ে আসবেন। তখন ডবল ইঞ্জিন সরকার করতে গেলে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে।' এই ঘটনাপ্রবাহ থেকেই কৌস্তভের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা দানা বাঁধে। যা বুধবার তাঁর কংগ্রেস ত্যাগের পর আরও জোরালো হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
কৌস্তভের ইস্তফা প্রসঙ্গে কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেছেন,'একটা অজুহাত তো লাগবে। কংগ্রেসকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন।'