২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করেছিলেন। বর্তমানে রাজ্যের বেশিরভাগ মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে মাসে মাসে ভাতা পান। প্রথমে তফশিলি জাতি ও উপজাতি মহিলারা মাসে ১০০০ টাকা করে ও অন্যরা মাসে ৫০০ টাকা করে পেতেন। বর্তমানে ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ১২০০ টাকা ও ১০০০ টাকা করা হয়েছে। এই প্রকল্প মহিলাদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর তারপরেই রাজ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রতিবাদে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা নিতে চান না বলে জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এনিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
অনেকেই আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ফেরতের দাবি করছেন। তাঁদের বক্তব্য, যে রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষা নেই, সেখানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুদান নেওয়ার কোনও মানে নেই। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের মোট ভোট ব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ মহিলারা। আর তাঁদের জন্যই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে মহিলারাই যদি এনিয়ে আপত্তি তোলেন, তাহলে সেটা কড়া বার্তা হিসেবেই রাজ্যের শাসকদলের দেখা উচিত। এনিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কীভাবে ফেরানো যায় তা নিয়ে সরকারি ফর্ম জারির দাবি জানিয়েছেন তিনি। ২৩ অগাস্ট এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, 'যাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং রাজ্য সরকারের অন্যান্য স্কিমগুলিতে থাকতে চান না, তাঁদের জন্য ফেরত দেওয়ার একটি ফর্ম দিক রাজ্য সরকার। দুয়ারে সরকার শিবিরে ফেরত কাউন্টার থাকুক। ফেসবুকে বিকৃত বিপ্লবী না সেজে, ফেরত ফর্ম ফিল আপ করুন। আমরাও RGKor দোষী/দের ফাঁসি চাই। কুরাজনীতি নয়।' (অসম্পাদিত)।
আজকে আমরা জানব লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আবেদন কীভাবে করতে হবে তার বিষয়ে। এছাড়াও জানব যারা ইতিমধ্যেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পান তাঁরা সেই টাকা পাওয়া বন্ধ করবেন কীভাবে।
প্রথমে জেনে নিন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেতে আবেদন করবেন কীভাবে
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আবেদন করতে লাগবে-স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জেরক্স, আধার কার্ডের জেরক্স, তফসিলি জাতি বা তফসিলি জনজাতি শংসাপত্রের জেরক্স, ব্যাঙ্কের পাসবই, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্য়াঙ্কের ঠিকানা, IFSC কোড এবং MICR কোড। এছাড়াও লাগবে পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ফটো। আবেদনকারীকে একটি স্ব-ঘোষণাপত্র দিতে হবে। তাতে জানাতে হবে যে আবেদনকারী পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
এছাড়াও, তিনি কোনও সরকারি/ সরকারি নিয়ন্ত্রাণাধীন সংস্থা/বিধিবদ্ধ সংস্থা/ পঞ্চায়েত, পৌরনিগম/পুরসভা/ স্থানীয় স্ব-শাসিত সংস্থা/ সরকার পোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে চাকরি করে মাসিক উপার্জন করেন না। এছাড়াও জানাতে হবে যে আবেদনপত্রে দাখিল করা সমস্ত তথ্য সত্য। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের বিষয়ে বিশদে জানা যাবে wbcdwdsw.gov.in এই ওয়েবসাইটে। এখান থেকে ফর্মও পাওয়া যাবে। ফর্ম ডাউনলোড করে প্রিন্টআউট করতে হবে। এরপর পূরণ করে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে বা বিডিও অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ফেরানো
এখন প্রশ্ন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ফেরানোর জন্য কী করতে হবে, তা অনেকেই জানেন না। কোথায়, কীভাবে আবেদন করবেন সে সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, এসডিও অফিসে গিয়ে আবেদন করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প থেকে নাম মুছে ফেলা যাবে। এর জন্য লাগবে, আবেদন পত্র, প্যান কার্ডের জেরক্স, আধার কার্ডের জেরক্স, ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের প্রথম পাতার ছবি। আবেদন করলেই সরকারি পোর্টাল থেকে আপনার নাম মুছে ফেলা হবে। তারপর থেকে আপনি আর মাসে মাসে টাকা পাবেন না।