ইলিশ মুছে যাচ্ছে পশ্চিমবাংলার জীবন থেকে
এ রাজ্যে ধীরে ধীরে বড় ইলিশ কি মুছে যাচ্ছে ? ভবিষ্যতে হয়তো বড় ইলিশের জন্য বাংলাদেশের উপরই নির্ভর করে থাকতে হবে বাংলার ইলিশপ্রেমীদের। এমনই ইঙ্গিত মিলেছে চলতি মরশুমে। আর এমন সংকেত মিলতেই ঘুম উড়েছে মৎস্য দফতর থেকে মৎস্যজীবীদের।
ট্রলার ফিরছে শূণ্য হাতে
অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ১ কেজি সাইজের বেশি ওজন ও আকারের ইলিশ বোধহয় আর এ রাজ্যে নাও পাওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যেই অশনি সংকেত মিলেছে চলতি মরশুমে। বারবার সমুদ্রে গিয়ে ট্রলার ফিরেছে শূন্য হাতে। সুতরাং ইলিশ যে আর এ রাজ্যের সমুদ্রে মিলছে না তা জলের মতোই পরিষ্কার।
ইলিশের উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান, কমেছে ৬৫ শতাংশ
ইলিশের পরিমাণ কতটা কমেছে, তা হিসেব দিলে পরিষ্কার বোঝা যাবে। এ রাজ্যের মৎস্য দফতর সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৬৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। নামখানা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ডহারবার, দীঘা উপকূলে প্রতি দিন ৩০থেকে ৪০ টন ইলিশ মিলত বছর তিনেক আগে পর্যন্তও। চলতি বছরে সেখানে প্রতিদিন টেনেটুনে ১০ টনও ওঠেনি। বেশিরভাগ দিনই ২-৪ টনে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে বেড়েছে ৭০ শতাংশ
অথচ বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশে দশ বছর আগে পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১১- থেকে ১১৫ টন ইলিশ উঠত। এখন তা বেড়ে হয়েছে গড়ে ১৫০ টন।
ভৌগোলিক পরিবেশ প্রায় একই, তবু ইলিশ নেই এ রাজ্যে
দুদেশের একই ধরণের জলভাগ ও ভৌগোলিক এলাক থাকা সত্ত্বেও ইলিশে এমন বৈষম্য কেন ? কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে আসছে আইনের কড়াকড়ির বিষয়টি। বাংলাদেশে ছোট ইলিশ অর্থাৎ ৩০০ গ্রামের কম ওজনের মাছ ধরলে মৎস্যজীবীদের জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। জেল ও জরিমানাও রয়েছে। এমনকী সেনাবাহিনীও হস্তক্ষেপ করে ইলিশ ধরা আটকাতে। ফলে ঝামেলা এড়াতে কেউ খোকা ইলিশ ধরে না।
আইনের ফাঁক ও রূপায়নে গলদ
এ রাজ্যের ইলিশ ধরার আইনেই ফাঁক রয়েছে বলে মৎস্যজীবীদের অভিযোগ। ছোট ইলিশ বা খোকা ইলিশ ধরা বারণ রয়েছে রাজ্যের ইলিশ নিয়ন্ত্রণ আইনে। অথচ কেউ ছোট ইলিশ ধরেছে জানলে, সেই ইলিশ ধরে বাজেয়াপ্ত করে মৎস্য দপ্তর। তারপর কি হয় ? সেই ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
ছোট ইলিশ চাষে ঘুরিয়ে উৎসাহ
বাজারে ক্রেতারাও ছোট ইলিশ কম দামে পেয়ে সেই ইলিশ নিয়ে বাড়ি যান। অন্যদিকে সেই নিলামের টাকার অর্ধেক মাৎস্যজীবীদের দেওয়া হয়। চাষীদের ঘুরিয়ে ছোট ইলিশ ধরাতে উৎসাহই দেওয়া হচ্ছে বলে মৎস্যজীবী অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ।
বাংলাদেশে ছোট ছিদ্রের জাল নিষিদ্ধ
অথচ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ছোট ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ এবং সেখানেই ধরলে গ্রেপ্তারি. জরিমানাসহ কঠোর আইন রয়েছে। যার ফলে ছোট ইলিশ মাছ ধরা হয় না বললেই চলে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে জলের আয়তন ১০০ মিলিমিটার।
এ রাজ্যে ছোট ছিদ্রের জাল ব্যবহার হচ্ছে অবাধে
অথচ আমাদের রাজ্যে ৯০ মিলিমিটার জাল আইনে থাকলেও আদতে ৬০ মিলিমিটারের কম আয়তনের ফাঁসের জাল ব্যবহার করা হয়। ফলে তাতে অবাধে ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে। এই ছোট ছিদ্র জাল ব্যবহার বন্ধ না করতে পারলে ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করা যাবে না। পাশাপাশি আইনের কঠোর করতে হবে ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে তা খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধ না করলে আবার মাছ চাষীদের সেই টাকা অর্ধেক টাকা দেওয়া বন্ধ না করলে আদতে ইলিশ ধরা বন্ধ হবে না। মৎস্য দফতর শুনছেন কি না, জানা নেই। তবে ইলিশপ্রেমীদের উৎকণ্ঠা বাড়ছে।