
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভা নির্বাচনের আর হাতে গুণে কয়েক মাস বাকি। তবে SIR ইস্যুকে কেন্দ্র করে এখনই কার্যত প্রচারে ঝড় তুলছে শাসক ও বিরোধী পক্ষ। মঙ্গলবার যে মালদায় হিন্দুদের একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, বুধবার সেখানেই জনসভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দুর হিন্দুদের একজোট হওয়ার বার্তা
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার মালদার ইংরেজবাজারের সভা থেকে বার্তা দেন, 'ভাষা, জাতের নামে বিভক্ত হওয়া যাবে না। হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেউ বা কারা বলে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আর এই রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কথা, ধর্ম যার যার, আর রক্ষা করার দায়িত্বও তার। আমরা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, জাতের নামে বিভক্ত হয়ে যাই। এর সুযোগ অন্যরা নেয়। তাই, আপনাদের ভাষার নামে, জাতের নামে বিভক্ত হওয়া যাবে না।' ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ' রাজধর্ম পালনের যাঁদের কথা, তাঁরা ভোটব্যাঙ্ক ও তোষণের রাজনীতির জন্য আমাদের সাহায্য করছেন না। আমরা আমাদের ভালটা অনেকে বুঝতে পারছি না। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার জামা গায়ে দিয়ে রেখেছি। আমরা কাউকে আঘাত দিতে চাই না। আমরা সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। কিন্তু, আমরা কেন আক্রান্ত হব?'

মালদার সমীকরণ
মালদা জেলা বরাবরই মুসলিম অধ্যুষিত। এখানে ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, মুসলিমদের জনসংখ্যা ৫১.২৭% এবং হিন্দুদের জনসংখ্যা ৪৭.৯৯%।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের সময়ে মালদায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ৪ হাজার ১৯৪। এর মধ্যে মালদা উত্তর কেন্দ্রের মোট ভোটার ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ২ হাজার ৩৫। মালদা দক্ষিণের মোট ভোটার ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ২ হাজার ১৫৯।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে মালদা দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে ভোটে জয়ী হন কংগ্রেসের ঈশা খান চৌধুরী। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৪১.৭৯%। উল্লেখযোগ্য ভাবে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন BJP প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৩২.৪২%। সেখানে তৃতীয় স্থানে থাকা তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রইহানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ২১.৯৮%।
মালদা উত্তর কেন্দ্রের জয়ী সাংসদ BJP-র খগেন মুর্মুর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৭.৬১%। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তৃণমূল প্রার্থী মৌসুম নূর পেয়েছিলেন ৩১.৩৯%।
উল্লেখ্য, যে ইংরেজবাজারে শুভেন্দু জনসভা করেন, সেটি মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইংরেজবাজার বিধানসভায় BJP প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৮.৮৬% ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ২২.৫২% ভোট। তৃণমূল প্রার্থী ১৫.৫৩% ভোট পেয়েছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে জিতেছিলেন BJP প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। তিনি পেয়েছিলেন ৪৯.৯৭% ভোট। তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৪০.৬৫% ভোট। BJP প্রার্থী জিতেছিলেন ২০ হাজারের বেশি ভোটে।

মমতার জনসভা
বুধবার মালদার গাজোলে সভা করবেন তৃণমূল নেত্রী। নিশানায় কি সংখ্যালঘু ভোট? সেই কারণেই কি গৌড়বঙ্গের ৩ জেলার দিকে বেশি নজর দিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল?
ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই গাজোলকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে অবশ্য ব্যাখ্যা তৃণমূলের। মালদা জেলার প্রায় কেন্দ্রস্থলে গাজোলের অবস্থান৷ বিশেষত উত্তর মালদার মানুষজন খুব সহজেই গাজোলে চলে আসতে পারেন৷ জেলার বাকি অংশ থেকেও গাজোলের দূরত্ব খুব বেশি নয়৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য গাজোলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
মুর্শিদাবাদ লাগোয়া ফরাক্কা, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান, জিয়াগঞ্জ এলাকার মানুষজনও ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই গাজোলে পৌঁছতে পারবেন। সহজেই চলে যেতে পারবেন দক্ষিণ দিনাজপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের দক্ষিণাংশের লোকজনও। মালদা জেসলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রায় কেন্দ্রে এই গাজোল। একুশের ভোটে তৃণমূল ভাল ফল করেছে গাজোলে। সে কারণেই এই এলাকাকে নেত্রীর জনসভার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আবার বাংলায় ওয়াকফ বিল লাগু হবে না বলে কথা দিয়েও ইউ-টার্ন নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। যা কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে মালদা জেলার সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে। তার উপর রয়েছে SIR, NRC-র মতো ইস্যু। ফলে এই SIR-কে হাতিয়ার করে সংখ্যালঘু ভোটারদের আস্থা ধরে রাখতে উদ্যত ঘাসফুল।