
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে মাটির গভীরে বিপুল পরিমাণ খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার থাকার সম্ভাবনা। পরীক্ষামূলক খনন শুরু করতে চলেছে ONGC। ইতিমধ্যে খনন যন্ত্র আনার জন্য জোরকদমে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অফিসারদের থাকার ঘর, কনফারেন্স রুম-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হচ্ছে।
বারুইপুর পূর্ব বিধানসভার বেগমপুর পঞ্চায়েতের ২০০ কলোনী এলাকায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে তিন বছরের চুক্তিতে জমি নেওয়া হয়েছে। জমির বিনিময়ে কৃষকরা প্রতি বিঘা জমির জন্য ২ লক্ষ টাকা করে পাবেন।
বারুইপুর পূর্বের বিধায়ক বিভাস সর্দার জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে ১০০ একর জমিতে কাজ শুরু হয়েছে। তাঁর মতে, এই প্রকল্প সফল হলে এলাকার আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটবে। বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
জমির মালিক প্রদীপ মণ্ডল ও খোকন সরকার জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে গ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে আরও জমি দিতে প্রস্তুত তাঁরা। খনন প্রকল্পে যুক্ত সুপারভাইজার সোনা খান জানালেন, বহুদিন আগেই ONGC এখানে সার্ভে করে গিয়েছিল। চার মাসের মধ্যে তাঁদের কাজ শেষ করার টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। তাঁর মতে, প্রকল্প সফল হলে গোটা অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন হবে।
অশোকনগরের কথা জানেন তো?
তবে বাংলায় খনিজ তেলের আবিষ্কার নতুন কিছু নয়। এর আগেও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে গ্যাস ও খনিজ তেলের সন্ধান মিলেছিল। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ওএনজিসি-অয়েল অশোকনগরে পরীক্ষামূলক খনন শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে ৩.৫ একর জমির উপর খনন করে সন্ধানের কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলাকালীন ২০১৭ সালেই ওএনজিসি নিশ্চিত হয় যে, অশোকনগরের ভূগর্ভে বিপুল তেল ও গ্যাস রয়েছে। পাঁচটি কুয়ো খননের পরিকল্পনার মধ্যে তৃতীয় কুয়ো খননের সময়ই ২০১৮ সালে গ্যাসের বিপুল ভাণ্ডার মেলে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই মেলে তেলের সন্ধানও।
তেল তোলার আগে হলদিয়ার ইন্ডিয়ান অয়েল রিফাইনারিতে ৩০ হাজার লিটার অপরিশোধিত তেল পাঠানো হয়। এর গুণমান যথেষ্ট ভাল ছিল বলেই জানায় রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ। এরপর অশোকনগরের বাইগাছিতে বাণিজ্যিকভাবে খনিজ তেল তোলা শুরু হয় । ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। সেই খনিই রাজ্যের প্রথম বাণিজ্যিক তেলকূপ হিসাবে চিহ্নিত হয়।
এরপর বারুইপুরেও সেরকমই কিছু ঘটে কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে স্থানীয়রা।
খনিজ তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডার কীভাবে খুঁজে বের করা হয়?
সিসমিক সার্ভে: শব্দ তরঙ্গ পাঠিয়ে মাটির নিচে তেল আছে কিনা যাচাই করা হয়।
গ্র্যাভিটি ও ম্যাগনেটিক পরীক্ষা: মাটির চৌম্বক ও অভিকর্ষীয় বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে নিচের গঠন বোঝা হয়।
ড্রিলিং (খনন): প্রাথমিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হলে, পরীক্ষামূলকভাবে কুয়ো জাতীয় খনন করা হয়। তার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে আদৌ তেল বা গ্যাস আছে কি না।
এই তিন পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে যখন পর্যাপ্ত তেলের ভাণ্ডার আছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তখনই পূর্ণমাত্রায় খনন ও তেল তোলার কাজ শুরু হয়। এই গোটা প্রক্রিয়াটিই ONGC-এর মতো সংস্থার তত্ত্বাবধানে হয়।