তামিলনাড়ুতে হার্ট অ্যাটাক বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের 'SIR নিয়ে চিন্তায় ছিলেন', দাবি পরিবারের।পূর্ব বর্ধমানের নবগ্রামের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য। সম্প্রতি তামিলনাড়ুতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় বিমল সাঁতরার। পরিবারের দাবি, SIR আতঙ্কেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
সূত্রের খবর, বিমল সাঁতরার বয়স ৫১ বছর। তিনি জামালপুর থানার আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নবগ্রাম উড়িষ্যা পাড়ের বাসিন্দা। জীবিকার সন্ধানে তামিলনাড়ুর তাঞ্জিবুর জেলার ওরাতান্দু পাটুকুটা এলাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন।
পরিবারের দাবি, কিছুদিন ধরে কাজ বন্ধ ছিল। তাই বিমলবাবু ঠিক করেছিলেন, বাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু হঠাৎই বাংলায় SIR চালু হয়। এই নিয়েই চিন্তায় পড়ে যান তিনি।
ছেলে বাপি সাঁতরা বলেন, 'বাবা খুব চিন্তায় ছিলেন। কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, কীভাবে ফিরবেন, এসব নিয়েই ভাবছিলেন। এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন।'
পরিবার জানায়, বিমলবাবুকে স্থানীয়রা তাঞ্জিবুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। গত ২৮ অক্টোবর ভর্তি করা হয় তাঁকে। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের পর শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বিমলবাবুর দেহ জামালপুরে ফেরানো হয়।
এদিকে এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন, 'মানুষ এখন SIR নিয়ে ভয় পাচ্ছে। কী হবে বুঝতে পারছে না। বিমলবাবুও সেই আতঙ্কেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।'
তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের দাবি, 'SIR আতঙ্কেই জান গেল বিমলবাবুর।'
তবে বিজেপির দাবি একেবারেই উলটো। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। জামালপুর মণ্ডল সভাপতি প্রতাপচন্দ্র পাল বলেন, 'যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু তৃণমূল এই মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি করছে। SIR নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বিমলবাবু হয় তো শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মারা গিয়েছেন।'
বিজেপি নেতা আরও বলেন, 'তৃণমূল এখন শ্মশান রাজনীতি করছে। কেউ মারা গেলেই বলছে, SIR আতঙ্কে মৃত্যু।'
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে। অনেকে বলছেন, 'এমন ঘটনা শুনে আরও ভয় লাগছে।'
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিমল সাঁতরার মৃত্যুর বিষয়ে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকদের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
পুরো ঘটনায় গ্রামে এখন শোকের ছায়া। এমনিতেই এই জেলা থেকে বহু মানুষ ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে যান। ফলে এহেন ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবারগুলি। বিমল সাঁতরার পরিবার বলছে, 'আমরা শুধু চাই, এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে।'
সংবাদদাতা: সুজাতা মেহেরা