মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি।-ফাইল ছবিওয়াকফ আইনের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া হিংসা একাধিক পরিবারের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন বহু নিরপরাধ মানুষ। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ৭২ বছরের গোবিন্দ দাস ও তাঁর ৪০ বছরের ছেলে চন্দন দাস। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর প্রাণ বাঁচাতে তাঁদের পরিবারের ১৩ জন সদস্য ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
পরিবারের এক সদস্য হৃদয় দাস জানান, ১২ এপ্রিল সকাল ১১টা নাগাদ প্রায় ৫০০ জন দাঙ্গাবাজ তাঁদের বাড়ি ও দোকানে চড়াও হয়। গোবিন্দ দাস এবং চন্দনকে দোকান থেকে টেনে বার করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর পরেই পুরো বাজারজুড়ে ব্যাপক লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহিলাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ।
হিংসার সূত্রপাত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের সুতিতে শুক্রবার নামাজের পর। ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ অবরোধ সরানোর চেষ্টা করতেই শুরু হয় পাথরবৃষ্টি। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। পরে জনতা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে দু’টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
শমশেরগঞ্জ, যা সুতির থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে, সেখানেও একই রকম হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশ তখন সুতিতে ব্যস্ত থাকায়, শমশেরগঞ্জে পৌঁছাতে দেরি হয় এবং বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি ঘটে যায়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফকে নামাতে হয়। বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ রাত পর্যন্ত চলে। মালদা ও বহরমপুর থেকে অতিরিক্ত বাহিনী এসে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে।
এনআরসি আন্দোলনের সময়ও মুর্শিদাবাদে এই ধরনের হিংসা দেখা গিয়েছিল। এবারও সেই একই ছবি। স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন এলাকাবাসী। দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি উঠেছে নিহতদের পরিবারের তরফে। বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে আশ্রয় নেওয়া গোবিন্দ দাসের পরিবার শোকের ছায়ায়, এখনও আতঙ্ক কাটেনি তাঁদের চোখে-মুখে।