নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ১৮ বছরের তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় একের পর এক প্রশ্ন উঠে আসছে। রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) বর্তমানে এই ঘটনার তদন্ত করছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তরুণীর মুখে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল তাঁর মৃত্যুর আগে। অর্থাৎ, অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনি প্রাণ হারান। এখন একটা প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা হচ্ছে, তিনি নিজেই নিজের মুখে আগুন লাগিয়েছিলেন, না কি অন্য কেউ বলপূর্বক করেছিল?
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে যে এটি আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে। তবে, সম্পূর্ণ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। তাই তার আগে পুলিশ কোনো নিশ্চিত বক্তব্য দিতে নারাজ।
আপাতত কোনও ধর্ষণের প্রমাণ নেই
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, মৃতদেহে অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কোনও যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি। এই তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী দল বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফরেনসিক সূত্রের খবর, মৃত তরুণীর মুখের দগ্ধ জায়গায় কেরোসিন জাতীয় রাসায়নিকের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও, ঘটনাস্থল থেকে একটি কেরোসিনের বোতল ও দেশলাই বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে। ফরেনসিক দল এই বোতল ও দেশলাই বাক্স থেকে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে। এটি মৃত তরুণীর আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।
ঘটনা সূত্র
ঘটনাস্থলে একটি পুজো প্যান্ডেলের কাছেও আগুনের দাগ পাওয়া গিয়েছে। নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এদিকে, তদন্তের অংশ হিসেবে মৃতার প্রেমিক রাহুল বোসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, তরুণীর ফোন থেকে শেষ কলটি করা হয়েছিল রাহুলকেই। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় রাহুল খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ তাঁর মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার সময় তিনি রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কাছের একটি মাঠে ছিলেন।
মৃত্যুর আগে ফেসবুক স্টোরি
তরুণীর মৃত্যুর আগে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁর ফেসবুক স্টোরিতে লেখা ছিল, 'আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, আমি নিজেই দায়ী।' এরপর সেই পোস্ট দেখে রাত ১১টার পর এক বন্ধু রাহুলকে ফোন করে। জানার পরেই রাহুল তরুণীর নম্বরে একাধিকবার কল করেছিলেন, কিন্তু ফোন রিসিভ হয়নি। এমনটাই জানিয়েছেন রাহুল।
পরিবারের অভিযোগ
প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষণ বা খুনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তরুণীর পরিবার রাহুল এবং তাঁর বন্ধুদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ এনেছে। মৃতার মা রাহুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে রাহুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কৃষ্ণনগরের পুলিশ সুপার কেএ অমরনাথ জানিয়েছেন, 'ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যুর কারণ আগুনে দগ্ধ হওয়া। মৃতদেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন বা যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি।'
ঘটনার পুরোদমে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশের বিশেষ টিম।