
নাজনীন মুন্নি বাংলাদেশের পরিচিত ও অভিজ্ঞ একজন সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গ্লোবাল টিভি বাংলাদেশের সংবাদ প্রধান (হেড অব নিউজ) হিসেবে কর্মরত। চলতি বছরের জুলাই মাসে তিনি ওই চ্যানেলে যোগ দেন। তার আগে দীর্ঘদিন তিনি ডিবিসি নিউজে অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি স্পষ্টভাষী ও দৃঢ় অবস্থানের জন্য পরিচিত।
কিন্তু সম্প্রতি তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে গুরুতর নিরাপত্তা সঙ্কট। অভিযোগ, নিজেদের ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সদস্য বলে দাবি করা একদল যুবক নাজনীন মুন্নির অপসারণ দাবি করেছে। শুধু তাই নয়, দাবি মানা না হলে গ্লোবাল টিভির অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এই হুমকি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ঢাকায় প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার-এর অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটেছে।
ঘটনাটি ঘটে ২১ ডিসেম্বর, ঢাকার তেজগাঁওয়ে গ্লোবাল টিভির অফিসে। সাত-আটজন যুবক সেখানে গিয়ে চ্যানেলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে। নাজনীন মুন্নির অভিযোগ, তাঁরা তাঁকে আওয়ামী লীগ-সমর্থক আখ্যা দিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি তোলেন। এমনকি চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ হুসেনকে একটি কাগজে সই করতে বলা হয়, যেখানে লেখা ছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নাজনীন মুন্নিকে সরাতে হবে। কর্তৃপক্ষ সই করতে অস্বীকার করলে হুমকি আরও চড়া হয়।
নাজনীন মুন্নি নিজে একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, তাঁকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, 'আপনি পদত্যাগ না করলে প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারের মতো আপনার অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হবে।'
তিনি জানান, অভিযুক্ত যুবকরা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি। বারবার রাজনৈতিক সংযোগের প্রমাণ চাইলে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তবু ভয় দেখানো ও চাপ তৈরি করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, একসময়ের আন্দোলনকারী প্ল্যাটফর্ম কীভাবে উগ্র ও ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও স্বীকার করেছে, এই হুমকি তাদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নয়। সংগঠনের সভাপতি রাশিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় অনুমতি ছাড়াই নগর ইউনিটের এক সদস্য এই কাজ করেছেন।
তবুও বাস্তবতা হল, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ চরমে। নাজনীন মুন্নির ঘটনাকে অনেকেই দেখছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত হিসেবে। নিজে অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি ভীত নন এবং পেশাগত দায়িত্ব থেকে সরবেন না।