বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজরক্তাল্পতার রোগিণীর জন্য আনা রক্ত ভুল করে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাপে কাটার রোগিণীর শরীরে। দু’জনের নামই নমিতা। তবে পদবি ভিন্ন। প্রায় এক সপ্তাহ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হল সেই সাপে কাটা রোগিণীর। শুক্রবার এই নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ল সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ।
জানা গিয়েছে, মৃত ওই রোগীর নাম নমিতা বাগদি। বয়স ৪৪ বছর। বাড়ি বীরভূমের রামচন্দ্রপুরের সুপুর গ্রামে। জমিতে চাষের কাজ করার সময় তাঁকে সাপে কামড়ায়। গত সপ্তাহে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি নমিতা মাঝির জন্য আনা রক্ত নমিতা বাগদিকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই শুক্রবার ভোরে সাপে কাটা সেই নমিতা বাগদিই মারা যান।
মৃত রোগীর ছেলে রাহুল বাগদি জানান, তাঁর মা নমিতা বাগদিকে বোলপুর থেকে পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতলে। হাসপাতাল থেকে জানানো হয় নমিতা বাগদির শরীরে চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ পাওয়া গিয়েছে। সেই মতো চিকিৎসা চলছিল। কিছুদিন থাকার পর অবস্থার উন্নতিও হয়। কিন্তু গত শনিবার কর্তব্যরত চিকিৎসক বা নার্সের গাফিলতিতে নমিতা মাঝি নামে অন্য এক রোগীর জন্য আনা রক্ত তাঁর মায়ের শরীরে দেওয়া হয়। তৎক্ষণাৎ তাঁর মা ছটফট করতে শুরু করেন। অন্যদিকে ওই একই ওয়ার্ডে ভর্তি নমিতা মাঝির পরিজনরা সেই সময় এসে প্রশ্ন করেন, তাঁদের রোগীর রক্ত এখনও কেন দেওয়া হল না? নমিতা মাঝির রক্ত নমিতা বাগদিকে কেন দেওয়া হল? এরপরই সামনে আসে গাফিলতির ঘটনা। নমিতা বাগদির বাবা দুকড়ি বাগদির দাবি, যখন নার্স এসে ডাকেন, তখন শুধু বলেছিলেন 'নমিতার বাড়ির লোক কে আছে?' আর তাতেই নমিতা বাগদির জা এগিয়ে যান। বলা হয়, তাঁর রোগীকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। এরপরই নমিতা বাগদিকে রক্ত দেওয়া হয়। যদিও রক্ত লাগবে এমন কোনও বিষয় আগে থেকে জানানো হয়নি তাঁদের। ফলে এক নমিতার রক্ত আর এক নমিতাকে দিয়ে দেওয়ার জন্যই তাঁর মেয়ের প্রাণ গিয়েছে বলে দাবি মৃতার বাবার।
নমিতা বাগদির ভাইপো সুমন্ত বাগদি বলেন, আমরা রোগীকে বোলপুর থেকে এখানে এনেছিলাম বড় সরকারি নামকরা হাসপাতাল, চিকিৎসা ভালো হবে ভেবে। কিন্তু ডাক্তার এবং নার্সদের গাফিলতিতেই এমনটা হল। তাঁর আবেদন, আর যেন এমনটা অন্য কোনও রোগীর সঙ্গে না হয়, এটা যেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সরকার এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখেন। ঘটনায় হাসপাতাল সুপার তাপস ঘোষ জানিয়েছেন, একটা অভিযোগ পেয়েছি। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোগীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে গাফিলতির লিখিত অভিযোগে করেছেন। পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরেই পুরো বিষয়টা জানা যাবে।
রিপোর্টার- সুজাতা মেহেরা