শুভেন্দু অধিকারীজনগণকে বিভ্রান্ত করে SIR-র এনুমারেশন ফর্ম নিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ মালা রায়েরা। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও BLO-র থেকে এনুমারেশন ফর্ম গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের মুখপত্রে ছাপা সেই খবরও দেখান বিরোধী দলনেতা। SIR নিয়ে দ্বিচারিতা করছে তৃণমূল। মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, দাবি শুভেন্দুর।
মুখ্যমন্ত্রীর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকেও নিশানা করেন শুভেন্দু। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, তিনি নিজের হাতে ফর্ম গ্রহণ করেননি। বাংলার সমস্ত নাগরিক ফর্ম পূরণ না করলে তিনি করবেন না বলেও জানিয়েছিলেন মমতা। এর বিরোধিতা করে শুভেন্দু প্রশ্ন করেন, 'উনি সমস্ত নাগরিক বলতে কি চাইছেন? ভুয়ো ভোটাররাও ফর্ম ফিল-আপ করুক?'
শুভেন্দুর সাফ দাবি, SIR-র নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তৃণমূল কংগ্রেস। অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় ঢোকাতে চাইছে তারা। তিনি জানান, মৃত, একাধিক জায়গায় ভোটার কার্ড আছে, ভুয়ো, বাংলাদেশি মুসলিম অর্থাৎ অনুপ্রবেশকারী এদের ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ যাবে। তবে বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দু ও অন্যানু সংখ্যালঘুরা যাঁরা অত্যাচারিত হয়ে বাংলায় এসেছেন তারা CAA-তে অ্যাপ্লাই করলে সুরক্ষিত। এখানে বিভ্রান্তির কোনও জায়গা নেই।
শুভেন্দু আরও বলেন, "৩১ অক্টোবর SIR বৈঠকে উপস্থিত ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেস SIR-কে গ্রহণ করেছিল। এদিকে বাইরে NRC বলে মুসলিম ও শরণার্থী হিন্দুদের তাতাচ্ছে। মিথ্যাচার করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।" এই সংক্রান্ত সমস্ত প্রমাণ সহ তথ্যও দেখান শুভেন্দু।
শুভেন্দুর দাবি, BLO গৌতমবাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁর হাতে BLO ফর্ম তুলে দেন। তাদের মুখপাত্রে এই খবর ছাপা হয়।
শুভেন্দু এ-ও বলেন, "এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী CAA-কে NRC বলে ক্যাম্পেইন করে ভোট নিয়েছিলেন। বিহারে যখন SIR ঘোষণা হয়, এরপর একুশে জুলাইয়ের সভা থেকে বাংলায় SIR করতে দেবেন না বলেছিলেন। দলের সেকেন্ড ম্যানও বলেছিলেন, লাখ লাখ লোক নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘিরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। এরপর SIR ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন আধিকারিকদের ধমক দিচ্ছেন। SDO, BDO, ERO-দের সরাসরি হুমকি দেওয়া হচ্ছে। লাগাতার SIR-কে NRC বলা, SIR করতে দেব না বলে প্রচার করা চলছে। যখন দেখলেন SIR আটকানো যাবে না, CEC জ্ঞানেশ কুমারের বাপ তুলে আক্রমণ করেন। মোদীজি, শাহজি, নাড্ডাজি তো আগে থেকেই আছে।"
তাঁর আরও দাবি, "এটি আসলে SIR নিয়ে দ্বিচারিতা। মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাজ্যের মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যারা SIR-এর নামে তাতচ্ছে, তারাই সই করে ফর্ম নিচ্ছেন।"
SIR নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, "নির্বাচন কমিশন যে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল, তারা যখন বলল ১২টি রাজ্যে SIR হবে, সব হওয়ার পর যারা বলেছিল SIR করতে দেব না, তারা বিপদে পড়ল। এরপরও মুসলিম ও শরণার্থী হিন্দুদের ভয় দেখাতে NRC বলে প্রচার করছে। তবে তারা খাচ্ছে না। যারা ২০০২ সালের আগে যারা এসেছেন তাদের জন্য তো কোনও সমস্যা নেই। ভারত সরকার CAA-র মাধ্যমে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হিন্দুদের সহ নাগরিক দেওয়ার কথা, এটা আইন করে পাশ করা হয়েছে। নাগরিক হলে সিটিজেনশিপ অ্যাক্টে নাম উঠবে। হাসিনা সরকার পতনের পর অনেক হিন্দু বাংলাদেশ থেকে এদেশে বাধ্য হয়ে এসেছেন, সে জন্য ভারত সরকার ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সমস্ত শরণার্থী হিন্দুদের থাকার অনুমতি দিয়েছে।"
তাঁর সাফ কথা, যিনি SIR করতে দেব না, 'ঘেরাও কর দুঙ্গা' বলেছিলেন সেই মুখ্যমন্ত্রী SIR-এর ফর্ম নিজের হাতে নেন, এই ধরনের দ্বিচারিতা চালাচ্ছে তৃণমূল।