প্রথম ধাক্কা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ২০১৯ সালের তুলনায় বাংলায় পদ্মের আসন কমেছে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই শীতের আগমনের আগে আরও একবার ভোটবাক্সে ধাক্কা খেতে হল বঙ্গ বিজেপিকে। রাজ্যের ৬ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে পদ্ম শিবিরকে। এমনকি, ওই ৬ কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র মাদারিহাট বিজেপির দখলে ছিল। সবুজ ঝড়ে সেই কেন্দ্রটিও হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। যার জেরে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের উপর সে দলেরই একাংশের ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। সরাসরি রাজ্য নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে অনেক পদ্ম নেতাই সরব হয়েছেন। যে তালিকায় রয়েছেন দিলীপ ঘোষ, জিতেন্দ্র তিওয়ারির মতো নেতারা। আবার, উপনির্বাচনকে তেমন 'আমল' না দিয়ে ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা দখল নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কণ্ঠে।
আরজি করের প্রতিবাদে সরব হয়েছিল বিজেপি। বাংলার শাসকদলকে কোণঠাসা করতে কম কসুর করেনি তারা। তবুও পুজো শেষে উপনির্বাচনে মানুষের আস্থা কুড়োতে পারল না বিজেপি। যার প্রমাণ ভোটের ফল। কিন্তু কেন ভোটের লড়াইতে বঙ্গভূমিতে বিজয়রথ টানতে পারছে না পদ্ম শিবির? এই নিয়ে নানা মত নানা মহলে। হারের এ হেন পরিণতি নিয়ে বিজেপি নেতাদের একাংশই মুখ খুলেছেন। এক্স হ্যান্ডলে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি লিখেছেন, 'ব্যর্থতার কারণ অন্যের উপর চাপালে হারতেই হবে। হারের কারণ নিজের অন্দরে খুঁজতে হবে, তবেই জয় আসবে। এটা অরাজনৈতিক হলেও রাজনীতির জন্য় সত্য।'
উপনির্বাচনের ফল প্রসঙ্গে bangla.aajtal.in-কে দিলীপ বলেছেন, '৬টার মধ্যে ৫টা তৃণমূলের ছিল। ১টা আমাদের ছিল। ২০১৯ সালে এত ভাল ফল করার পরও উপনির্বাচনে আমরা হেরেছিলাম। আবার একুশে জিতেছিলাম সেগুলো। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরও তাই হচ্ছে। উপনির্বাচন যতগুলো হচ্ছে, তৃণমূল জিতছে। যেমন ইচ্ছা জেতে। এতে বেশি কিছু আশাও কেউ করেনি।' চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচনের পর উপনির্বাচনেও মেদিনীপুরে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে দিলীপ বলেছেন, 'মেদিনীপুরে কোনওদিন আমরা জিতেছি কি! লোকসভায় আমি লিড পেয়েছিলাম। তারপর বিধানসভায় হেরেছি আমরা। এই লোকসভা নির্বাচনেও হেরেছি। জেতার প্রশ্নই নেই।' তাঁর সংযোজন, 'ভোটের ফল ভাল না হলে রাজ্য নেতৃত্বের দিকে আঙুল উঠবে। কিন্তু এখানে উপনির্বাচন এখানকার সরকার করায়। ভোট দিতে বেরোয় না বিরোধীরা।'
দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপিতে 'সক্রিয়' নয় দিলীপ। এই প্রসঙ্গে বলেছেন, 'দল আমাকে যতটা বলছে, ততটাই করছি। জেলায় জেলায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে, সেখানে যাচ্ছি। ভোটের প্রচারেও গিয়েছিলাম। তার বেশি নয়। আমার কোনও পদ নেই, কোনও কমিটিতে নেই। দলের সিদ্ধান্ত নিই না। দল যা সিদ্ধান্ত নেয়, তা পালন করি।' বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বলেছেন, 'বারে বারে বুঝিয়েও আমাদের কেন্দ্রের নেতারা বুঝছে না। যেভাবে বিজেপি চলছে, সেভাবে ক্ষমতা দখল হবে না।'
তবে উপনির্বাচনের ফলকে তেমন 'আমল' দিতে চাননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বলেছেন, 'উপনির্বাচনে এরকমই হয়। তবে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে।' অন্য দিকে, উপনির্বাচনে ভোটবাক্সে ধাক্কা খাওয়ার পর পরই দলের বিধায়কদের নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার সল্টলেক সিটি সেন্টারে বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে বিক্রান্ত মেসি অভিনীত 'সবরমতী রিপোর্ট' সিনেমা দেখতে যান শুভেন্দু। যা এই পর্বে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
আবার, সুকান্তের পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি কাকে করা হবে, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই নানা মত প্রকাশ্যে আসছে। যার মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথাগত রায়ের মন্তব্য। শুভেন্দুকেই 'যোগ্য' হিসাবে মনে করেছেন তথাগত। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, 'শুভেন্দুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সুকান্ত এবং দিলীপের চাইতে অনেক দীর্ঘ।'
সবমিলিয়ে, উপনির্বাচনে ভরাডুবির পর রাজ্য বিজেপির অন্দরেই নানা মুনির নানা মত প্রকাশ্যে আসছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে দলের অন্দরের ফাঁকফোকড় ভরাট করে 'ক্ষমতা দখলের' লড়াইয়ে পদ্ম শিবির জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে কি না, সেটাই এখন চ্যালেঞ্জের বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।