
পৌষ মেলা ২০২৫বীরভূম জেলার বোলপুর শান্তিনিকেতনে শুরু হয়ে গেল পৌষমেলা। ২৩ ডিসেম্বর অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই শুরু হল ১৮২ বছরের পুরনো পৌষমেলা। প্রথম দিনেই পৌষমেলায় দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়। যা প্রমাণ করছে বাংলার লোকসংস্কৃতি, হস্তশিল্প এবং আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য এই মিলনমেলার জনপ্রিয়তা এতটুকুও কমেনি।
এদিন ছাতিমতলায় ব্রহ্ম উপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠ, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয়েছে এই মেলার। উপাসনা অনুষ্ঠানে ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ, অধিকর্তা অমিত হাজরা, অধ্যপক সুমন ভট্টাচার্য। আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে হাজির ছিলেন বীরভূম জেলা শাসক ধবল জৈন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, পড়ুয়া, আশ্রমিকেরাও।
এই বারের পৌষ মেলা চলবে মোট ৬ দিন। অর্থাৎ, ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই মেলা। বিশ্বভারতী সূত্রে খবর এবার নানা জিনিসের সম্ভার নিয়ে মোট ১৩৫০টি স্টল বসেছে মেলার মাঠে। তা ছাড়া এইবারে শিক্ষা ভবন, কলাভবন, রবীন্দ্র ভবন, চিনা ভবন, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেল-সহ বিভিন্ন বিভাগের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
মেলার নিরাপত্তায় রয়েছে ব্যাপক কড়াকড়িও। রবিবার থেকেই মাঠে বসানো হয়েছে প্রায় ৩০০টি ক্যামেরা। যানজট এড়াতে এবছর প্রথমবার রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোন করা হয়েছে। মেলার মাঠে রয়েছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। পাশাপাশি মেলার ভিতরে ও মেলার বাইরে থাকছে একাধিক পুলিশ হেল্প ডেস্ক। ফলে যে কোনও সমস্যায় সমাধান পাবেন মেলায় আসা দর্শকেরা। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য মোট ২,৫০০ পুলিশ মাঠে মোতায়েন থাকবে। তালিকায় রয়েছেন পুলিশ সুপার, ডিএসপি, এসডিপিও পদমর্যাদার অফিসারেরাও।


মেলার ইতিহাস জেনে নিন
উল্লেখ্য, ১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ অর্থাৎ ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কুড়ি জন সহব্রতী সহ রামচন্দ্র বিদ্যাবাগিশের থেকে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন। তার পর থেকে মূলত বিশেষ এই দিনটিকে পৌষ উৎসব হিসেবে পালন করা হয় শান্তিনিকেতনে। এরপর ধীরে ধীরে তৈরী হয় শান্তিনিকেতনে ট্রাস্ট এবং ১৮৬৩ সালে রায়পুরের জমিদারের কাছ থেকে ভূবনডাঙার প্রান্তরে প্রায় কুড়ি বিঘা জমি নেওয়ার পর মহর্ষি শান্তিনিকেতন গৃহ এবং তার কাছাকাছি ব্রাহ্ম মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। যা বর্তমানে উপাসনাগৃহ বা কাঁচ মন্দির নামেও পরিচিত। এই ব্রাহ্ম মন্দির ১৮৯১ সালের ৭ পৌষ উদ্বোধন করা হয়। এরপর ১৮৯৪ সাল থেকে মহর্ষির ইচ্ছায় মন্দির সংলগ্ন মাঠে পৌষ মেলা শুরু হয়। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।