প্রাণপ্রতিষ্ঠার আর মাত্র তিনদিন বাকি। তার আগে দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণে চলছে ব্যাপক যজ্ঞ, আচার ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। শুক্রবার অস্থায়ী আটচালা ঘরে ১২ লিটার দুধ দিয়ে স্নান করানো হল জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শন দেবতাকে। পাশাপাশি মন্দিরের বিমলা, লক্ষ্মী, সত্যভামা-সহ সমস্ত দেবদেবীরও স্নান সম্পন্ন হয়।
এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় হোমযজ্ঞ। পুরীর মন্দিরের রাজেশ দৈতাপতির নেতৃত্বে চারদিকে চারটি হোমকুণ্ড এবং মাঝে এক মহাকুণ্ডে জ্বলে উঠেছে পবিত্র হোমাগ্নি। গর্ভগৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ২৫ জন মহিলা কলস নিয়ে গর্ভগৃহ প্রদক্ষিণ করেন। মহাযজ্ঞের দিন ধার্য হয়েছে ২৯ এপ্রিল, এবং তার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন চলবে হোমযজ্ঞ।
৩০ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে হবে মন্দিরের দ্বারোদঘাটন এবং জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ২৮ এপ্রিল দিঘায় পৌঁছতে পারেন। তার আগে থেকেই দিঘা শহরকে সুদৃশ্য আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি নিজে পুরো বিষয়টির ওপর নজর রাখছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করা হয়েছে আঁটসাঁট। সব মিলিয়ে দিঘায় মেগা ইভেন্ট সফল হওয়া এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
দিঘার জগন্নাথ মন্দির নির্মিত হয়েছে পুরীর আদলে। মন্দিরের গঠনশৈলী থেকে পুজো ও ভোগ পরিবেশন—সব কিছুতেই প্রতিফলিত হচ্ছে পুরীর ছাপ। কলিঙ্গ স্থাপত্যের নিদর্শন এই মন্দির তৈরি হয়েছে 'সম্পরা' ঘরানায়, রাজস্থানের গোলাপি বেলেপাথর ব্যবহার করে। মন্দির নির্মাণে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৮০০ জন কারিগর, যাঁদের অধিকাংশই রাজস্থানের বাসিন্দা।
মন্দিরের প্রবেশপথেই রয়েছে তিনটি দীপস্তম্ভ। মূল মন্দিরে প্রবেশের জন্য থাকছে চারটি দ্বার। সিংহদ্বারের সামনে পুরীর আদলে নির্মিত হয়েছে ৩৪ ফুট উচ্চতার কালো পাথরের ১৮ মুখী অরুণা স্তম্ভ, যার মাথায় রয়েছে অরুণার মূর্তি। সিংহদ্বারে প্রবেশ করলেই সোজাসুজি দেখা যাবে জগন্নাথের মূর্তি। এছাড়া রয়েছে ব্যাঘ্রদ্বার (পূর্বদিকে), হস্তীদ্বার (উত্তরে) এবং অশ্বদ্বার (দক্ষিণে)।
ভেতরে প্রথমেই রয়েছে ভোগমণ্ডপ, যার চারটি দরজা রয়েছে। এরপর ১৬টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে থাকা নাটমন্দির, তার পরে চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়ানো জগমোহন। সবশেষে গর্ভগৃহ, যেখানে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত থাকবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। ভোগমণ্ডপ ও নাটমন্দিরের মাঝে স্থাপিত হয়েছে গরুড় স্তম্ভ। নাটমন্দিরের দেওয়ালে এবং মন্দিরের পাথরের দেওয়ালে বিভিন্ন ছোট ছোট দশাবতার মূর্তি ও অসংখ্য কারুকাজ করা হয়েছে। পুরীর মন্দিরের আদলে এখানে প্রতিদিন নিয়ম করে মন্দিরের চূড়ায় ধ্বজা পরিবর্তন করা হবে।