গতকাল শতদ্রু দত্ত।রবিবার বিধাননগর আদালতে আনা হল শতদ্রু দত্তকে। আদালতের বাইরে সেই সময়ই উত্তেজনা ছড়ায়। অনেকে শতদ্রুর গাড়ির সামনে ‘চোর চোর’ স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখান। শনিবার রাতে গ্রেফতার হওয়ার পর রবিবার তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়। লিওনেল মেসির কলকাতার অনুষ্ঠান ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা, ক্ষোভ আর অভিযোগের ঝড় উঠেছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতেই এখন শতদ্রু দত্ত।
এদিন শতদ্রু দত্তর আইনজীবী জানালেন, তাঁর মক্কেলকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সল্টলেকে অশান্তির জন্য সাধারণ দর্শকদেরও দোষারোপ করেন তিনি। বলেন, 'কে কী বলছে সেটা দেখার কাজ আমার নয়। ইভেন্ট ম্যানেজার আর অর্গানাইজারের কাজ আলাদা। উনি মেসিকে নিয়ে এসেছিলেন। সাধারণ দর্শকদের ব্যর্থতার কারণে ঝামেলা হয়েছে। আমার মক্কেলের কোনও দোষ নেই। নিরাপত্তার কথা যখন উঠছে তখন অনেককে দায়িত্ব নিতে হবে। সাধারণ মানুষ যেভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল, সেটা কাম্য নয়। এখনই কাউকে আমি দোষারোপ করতে পারব না। তদন্ত করে পুলিশ যেটা করবে সেটাই মেনে নিতে হবে। যারা ওখানে ছিল ও মেসিকে ঘিরে রেখেছিল তাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।'
শনিবার কলকাতা বিমানবন্দরে শতদ্রু দত্তকে আটক করা হয়। তিনি তখন হায়দরাবাদ রওনা হচ্ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপি রাজীব কুমার প্রথমে জানান, তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শতদ্রু লিখিতভাবে আশ্বাস দিয়েছেন যে, যাঁরা টিকিট কেটেও অনুষ্ঠান ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেননি, তাঁদের সকলকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। পরে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাওয়েদ শামিম জানান, শতদ্রুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিজিপি আরও জানান, গোটা ঘটনার তদন্তে একটি সরকার-নিযুক্ত কমিটি গঠন করা হবে। অনুষ্ঠান পরিচালনায় গাফিলতি ছিল কি না, ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশের দাবি, আয়োজকের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছে যাতে দর্শকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা যায়।
শনিবার সকাল থেকে সল্টলেক স্টেডিয়ামে মেসির উপস্থিতি ঘিরে উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। ‘গোট ট্যুর’-এর কলকাতা পর্বের সময়সীমা ছিল প্রায় চার ঘণ্টা। তালিকায় অতিথি হিসেবে নাম ছিল শাহরুখ খানেরও। যদিও তিনি আগে ভার্চুয়ালি মেসির ৭০ ফুট মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় বিধাননগরের সাংসদ সুজিত বসুও ছিলেন।
এরপর মেসি সল্টলেক স্টেডিয়ামে পৌঁছন ইন্টার মায়ামির সতীর্থ রদ্রিগো দে পল ও লুইস সুয়ারেজকে সঙ্গে নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত, মোহনবাগান কর্তারা শ্রীঞ্জয় বসু ও দেবাশিস দত্ত এবং বিশাল পুলিশ বাহিনী।
মাঠে নামার পর দর্শকদের শুভেচ্ছা জানাতে চারপাশে হাঁটছিলেন মেসি। কিন্তু ক্রমশ ভিড় ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে শুরু করে। পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে শিশুদের নিয়ে যে কোচিং ক্লিনিকের পরিকল্পনা ছিল, তা কার্যত ভেস্তে যায়। নিরাপত্তা ঝুঁকি বুঝে মেসি দ্রুত মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান।
তারপরই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। ক্ষুব্ধ দর্শকেরা মাঠে ঢুকে পড়েন, জলের বোতল ছোড়া হয়, পোস্টার ছেঁড়া হয়, বসার আসন ভাঙচুর হয়। অনেকেই অভিযোগ তোলেন, ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত টিকিট কেটেও তাঁরা কিছুই দেখতে পাননি। সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন এখন আদালত চত্বরের রাজনীতিতেও।