scorecardresearch
 

Singur Tata Motors: সিঙ্গুর-ধাক্কা, রাজ্যকে ঠিক কত টাকা গুনতে হবে-মামলাটি ঠিক কী? বিস্তারিত

Singur Tata Motors: টাটা-সিঙ্গুর বিতর্ক। বাংলা তথা ভারতের শিল্পের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায়। সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের প্রস্তাবিত অটোমোবাইল কারখানার জমি অধিগ্রহণ ঘিরে রাজ্যব্যাপী তোলপাড় হয়েছিল। আর এই সময়ের আন্দোলন থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী নেত্রী হিসাবে নিজের স্থান আরও দৃঢ় করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরের আফটারম্যাথ হিসাবেই পরে বামদের হঠিয়ে বিপুল জনসমর্থনে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। 

Advertisement
সিঙ্গুরের কাহিনী সিঙ্গুরের কাহিনী

Singur Tata Motors: টাটা-সিঙ্গুর বিতর্ক। বাংলা তথা ভারতের শিল্পের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায়। সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের প্রস্তাবিত অটোমোবাইল কারখানার জমি অধিগ্রহণ ঘিরে রাজ্যব্যাপী তোলপাড় হয়েছিল। আর এই সময়ের আন্দোলন থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী নেত্রী হিসাবে নিজের স্থান আরও দৃঢ় করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে তৃণমূল সরকারের ক্ষমতায় আসার পিছনেও অনুঘটকের কাজ করেছিল এই সিঙ্গুর আন্দোলনের সাফল্য়।

কিন্তু আজ সেই সিঙ্গুরই যেন তৃণমূল সরকারের 'অ্যাকিলিস হিল'। সিঙ্গুরে টাটার কারখানা তৈরি রুখে দেওয়া কি আদৌ নৈতিক ছিল? তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন একদা তৃণমূলপন্থীরাই। রাজ্যে শিল্প, কর্মসংস্থানের অভাবের পরিস্থিতিতে আরও জোরালো হয়েছে সেই প্রশ্ন।

তারই মধ্যে ৩০ অক্টোবর সিঙ্গুর বিতর্কে এল বড় মোড়। সিঙ্গুর মামলায় রাজ্যকে ১১% সুদ সহ টাটা মোটর্সকে ৭৬৬ কোটি টাকা প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছে মধ্যস্থতাকারী প্যানেল। 

আরও পড়ুন

যে টাটাকে হঠাতে তৃণমূল কংগ্রেস লড়েছিল, সেই সংস্থাকেই আজ এত বছর পর, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে।

সিঙ্গুর টাটা ন্যানো বিতর্ক- এক নজরে 

২০০৬ - ভিন্ন ধারার ভাবনা
ভারতে আমজনতা চার-চাকা গাড়ি কিনতে পারে না। ৩-৪ জনের পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন। তাই গরীব, নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য গাড়ি তৈরি করা। এটাই ছিল টাটা মোটর্সের অভিনব লক্ষ্য। আর সেই গাড়ির নাম দেওয়া হয় 'ন্যানো'। দাম ১ লক্ষ টাকার আশেপাশে।

সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে, ২০০৮ সালেই সিঙ্গুর থেকে টাটা ন্যানো পুরোদমে উৎপাদন করার লক্ষ্য স্থির করা হয়। 

২০০৬ - রতন টাটা ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বৈঠক
২০০৬ সালের ১৮ মে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তৎকালীন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নিরুপম সেনের সঙ্গে বৈঠক করেন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান রতন টাটা। বৈঠকের পরেই সিঙ্গুরে টাটা মোটর্সের ছোট গাড়ি তৈরির কারখানার ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। 

Advertisement

২০০৬ সালেই জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত
পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বামশাসিত রাজ্য সরকার  টাটা মোটরসের কারখানার জন্য ১৮৯৪ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইনে ৯৯৭ একর কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। 

২০০৬ সালে ২৭ মে থেকে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে হুগলি জেলা প্রশাসন তিনটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে। তৃণমূল কংগ্রেস সেই বৈঠকগুলি বয়কট করে। ৩০ নভেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিঙ্গুরে যেতে পুলিশ বাধা দেয়। রাজ্যের বিধানসভায় তাই নিয়ে তুমুল হট্টগোল হয়। বিধানসভার অভ্যন্তরে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কদের বিরুদ্ধে।

২০০৬-এর শেষ, অনশন শুরু
২০০৬ সালের ৩ ডিসেম্বর কলকাতার এসপ্ল্যানেডে আমরণ অনশন শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যজুড়ে চলতে থাকে আন্দোলন। 

২০০৮ - ক্রমেই শক্তি বাড়ে বিরোধী দলের
'কৃষি জমি বাঁচাও' আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষকরাও যোগ জেন। তীব্র বিরোধিতার জেরে দেশজুড়ে খবরের শিরোনামে উঠে আসে সিঙ্গুর আন্দোলন। একে একে পরিবেশকর্মী, বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মীরা এই আন্দোলনের সমর্থনে সমাবেশে যোগ দেন। ন্যানো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কার্যত বিশ বাঁও জলে চলে যায়।

২০০৮, অগাস্ট - মমতাকে বৈঠকে আহ্বান বুদ্ধদেবের
২০০৮ সালের ১৮ অগাস্ট এবং ২৫ অগাস্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলোচনার আমন্ত্রণ জানান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু তা প্রত্যাখান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৮ সালের ২৪ অগাস্ট সিঙ্গুরে কারখানা সংলগ্ন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী। 

অনিচ্ছুক কৃষকদের প্রায় ৪০০ একর জমি ফেরতের দাবি তোলেন তিনি। 

২০০৮- পুজোর আগেই টাটার স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
বিক্ষোভের মুখে ২০০৮ সালে টাটা মোটর্স বড়সড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ৩ অক্টোবর, দুর্গাপুজোর ২ দিন আগে, টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান রতন টাটা, সিঙ্গুর থেকে টাটা মোটর্সের কারখানা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করেন। কারণ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সমর্থকদের নেতৃত্বে নিরলস আন্দোলনের উল্লেখ করেন।

গুজরাতে শিফট
সিঙ্গুর থেকে বেরিয়ে আসার পরে, টাটা মোটর্স গুজরাতের সানন্দে টাটা ন্যানো প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে কার্যত কোনও বাধা ছাড়াই দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেয় টাটা মোটর্স। যদিও টাটা ন্যানো গাড়ি ভারতের বাজারে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। বিলম্বের কারণে সময়ের থেকে ন্যানোর প্রযুক্তি অনেক পিছিয়ে পড়ে। প্রথমে দাম ১ লক্ষ টাকা স্থির করা হলেও পরে তা অন-রোড ২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। গাড়ির মান খুব আহামরি ছিল না। তাছাড়া টাটার 'গরিবের গাড়ি' মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিও বাজারে মুখ থুবড়ে পড়ে। 

২০০৮ - আইনি চ্যালেঞ্জ
শিল্পের বিকাশের জন্য জমি অধিগ্রহণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। টাটা মোটর্স আইনি পথে হাঁটে।

২০১৬ - জমি ফেরত 
২০১৬ সালে, সুপ্রিম কোর্ট অধিগ্রহণকৃত জমি মূল জমির মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। 

২০২৩ - টাটা মোটর্সের জয়
কিন্তু এই গোটা পরিস্থিতির মাঝে টাটা মোটর্সের যে লোকসান হল? আইনে পথে এর ক্ষতিপূরণের দাবিতে অনড় থাকে টাটা মোটর্স। অবশেষে ৩০ অক্টোবর ২০২৩-এ মিলল তার জবাব। সিঙ্গুর মামলায় রাজ্যকে টাটা মোটর্সকে ১১% সুদ সহ ৭৬৬ কোটি টাকা মেটানোর নির্দেশ দিল মধ্যস্থতাকারী ট্রাইবুনাল। পাশাপাশি মামলার খরচ বাবদ ১ কোটি টাকাও পাবে টাটা মোটর্স।
 

Advertisement