সিউড়ি শহরে সদ্য প্রকাশিত ভোটার তালিকা ঘিরে তীব্র বিতর্ক। অভিযোগ সিউড়ি পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ মণ্ডল এবং তাঁর পরিবারেরই নাম নেই নতুন ভোটার তালিকায়। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
পরিবারের নাম উধাও
কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ মণ্ডল জানিয়েছেন, আগে তাঁরা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে থাকতেন। ২০১০ সালে পরিবার সহ ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে চলে আসেন। এরপর থেকে নিয়মিত ভোট দিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু এবারের প্রকাশিত ভোটার তালিকায় খুঁজেও মেলেনি তাঁর নাম। শুধু তিনিই নন, ভোটার তালিকায় নাম নেই তাঁর বাবা নিমাইচন্দ্র মণ্ডল, মা ভাগ্যবতী মণ্ডল এবং ভাই প্রজ্ঞাবত মণ্ডল-এরও।
প্রসেনজিৎ মণ্ডল জানান, একাধিক বুথের তালিকা খতিয়ে দেখেছেন তিনি। আশেপাশের কোনও বুথেই মেলেনি তাঁদের নাম।
আরও নাম উধাওয়ের অভিযোগ
তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু মণ্ডল পরিবারই নয়, সিউড়ি শহরের আরও অন্তত ১৫ থেকে ১৬ জন ভোটারের নাম নতুন তালিকায় নেই। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদের অভিযোগ, নাম বাদ পড়ায় সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন।
প্রশাসনের দ্বারস্থ কাউন্সিলর
বিতর্কের জেরে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ মণ্ডল। তিনি জানান, 'আমি আতঙ্কিত নই। কিন্তু সাধারণ ভোটাররা যে এসআইআর প্রক্রিয়ার জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তা স্পষ্ট।”
তিনি আরও দাবি করেন, প্রশাসনের উচিত দ্রুত সমস্যার সমাধান করা। নাহলে ভোটের সময় সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
বিজেপির তোপ
অন্যদিকে, ভোটার তালিকা প্রকাশের পর থেকেই সিউড়ি জুড়ে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর। এ নিয়ে মুখ খুলেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা পুলক চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, 'বর্তমান সরকারের কর্মচারীরাই এই সংযোজন ও বিয়োজনের কাজ করেছেন। রাজ্য জুড়ে ভুয়ো ভোটারের ছড়াছড়ি হয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে সেটাই আরও একবার প্রমাণিত।”
বিতর্কে সরগরম সিউড়ি
ভোটার তালিকা প্রকাশের পর থেকেই সিউড়ি জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ভুল সংশোধন না হলে ভোটের সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, শাসক দলের দাবি, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করা হবে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটের ঠিক আগে ভোটার তালিকা থেকে স্থানীয় কাউন্সিলরের পরিবারের নাম বাদ পড়া প্রশাসনিক গাফিলতির বড় উদাহরণ। বিরোধীরা এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘটনা বললেও, শাসক দলের দাবি, প্রশাসনিক ত্রুটির জন্যই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে, যা দ্রুত সমাধানের পথে যাবে।
জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত নাম সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সিউড়ির বাসিন্দাদের মতে, ভোটের আগে এমন বিতর্ক এলাকায় অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। অনেকেরই আশঙ্কা, নাম বাদ পড়ার ফলে ভোটের সময় আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
সংবাদদাতা: শান্তনু হাজরা