'বাড়ি থেকে বাবা-মা ফোন করে কান্নাকাটি করছে। ওরা সবই টিভিতে দেখেছে নিশ্চই। সবাই আমায় ফোন করে কাঁদছে। আমি মাথার চুল মুড়িয়ে ফেলেছি শুনে সবাই মর্মাহত। কিন্তু এটা আমার যন্ত্রণার প্রতিবাদ।' ট্রেনে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ফোনে 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন'কে বলছিলেন রাসমণি পাত্র। সারাদিনের ধকল ধরা পড়ছিল ক্লান্ত গলায়। একটু পরেই কলকাতা থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের ভোগপুরের বাড়িতে ঢুকবেন। সবাই অপেক্ষায়। উৎকন্ঠায় গলা ধরে আসছে রাসমণির।
চাকরির দাবিতে ১০০০ দিন কেটেছে রাস্তায়। চাকরি জোটেনি। নবম থেকে দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান অব্যাহত। আর শনিবার ধর্মতলার সেই ধর্নামঞ্চে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন রাসমণি পাত্র। একটাই দাবি তাঁর। চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হোক। তাঁর কথায়, 'ট্রেনে ফিরছি। বাড়িতে বাবা-মা চিন্তায়। স্বামী আমায় সাপোর্ট করেছে বলেই আন্দোলনে অংশ নিতে পেরেছি। আমার একটা ৭ বছরের ছেলে আছে। সকালে রান্না-ঘরের কাজ সেরে, ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে কলকাতায় এসেছি। তারপর আজকের কর্মসূচী। যা সবাই দেখল।'
নিজের মাথা মুড়িয়ে ফেলা কী একজন মহিলার কাছে খুবই সহজ? উত্তরে রাসমণি বললেন, 'রাতের পর রাত নিজেকে প্রশ্ন করেছি। কিছুতেই ভাবতেই পারছিলাম না, যে মাথার চুল কামিয়ে ফেলব। কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম না। নিজের সঙ্গে লড়াই করেছি বহুদিন। অনেক রাত ঘুমোতে পারিনি। শেষমেষ নিজেকে বুঝিয়েছি, যে সবার জন্য এই ত্যাগ দরকার। ১ হাজার দিন ধরে রাস্তায় আর কাটাতে পারছিনা।'
রাসমণি বললেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছি, পাশ করেছি। অথচ আমাদের চাকরি করছে অন্যেরা। এটা কিছুতেই মানতে পারছিনা। আইনের জট কাটানোর ক্ষমতা কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। আর কী কী ভাবে প্রতিবাদ করলে আমরা চাকরি পাব। এখন মাথার চুল দিলাম। এ বার চাকরির দাবিতে জীবনও দেব। তখন হয়তো চাকরি দেবে এই সরকার।'
চাকরিপ্রার্থীদের তরফে রাসমণির দাবি, ২০১৬ সালের এসএলএস-টির নম্বরভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সামনের সারির মেধাকে বঞ্চিত করে পিছনের সারির প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। এবং এসএমএসের মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে।
রাসমণি পাত্রর মাথা আজ মুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সেই চুল দান করা হয়েছে এক ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাকে। তিনি বাড়ি ফিরছেন। বাড়িতে সকলেই দুঃশ্চিন্তায়। অপেক্ষায়। তাঁর কোনও অনুশোচনা নেই। রাসমণি বললেন, '১ হাজার দিন কাটল। আমাদের চাকরির কোনও ব্যবস্থাই করা হচ্ছে না। আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। চুল তো অনেক তুচ্ছ। ছেলেকে বলে এসেছি। স্বামীকেও। এ যন্ত্রণা সবার। আন্দোলন চলবে। যতদিন না সুরাহা হয়। সুবিচার পাই।'