নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহা,কল্যাণ কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক কুমার সাহার জামিন নিয়ে দ্বিমত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মোট ৯ জনের জামিন মঞ্জুর করলেও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় ৫ জনের জামিন মঞ্জুর করেননি। মামলা যাচ্ছে প্রধান বিচারপতির কাছে। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন ফের তৃতীয় কোন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।
কৌশিক ঘোষ, আলি শাহীদ ইমাম, চন্দন মণ্ডল, সুব্রত সামন্তের জামিন মঞ্জুর করেছেন অপূর্ব সিনহা রায়। কিন্তু বাকিদের জামিন তিনি মঞ্জুর করেননি। ফলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যদের জামিন মিলল না হাইকোর্টে। কয়েকজন মিডলম্যানই খালি জামিন পেলেন। আপাতত এই মামলায় ফের প্রধান বিচারপতি নতুন বেঞ্চ তৈরি করবেন। সেখানেই হবে বাকি ৫ জনের জামিন সংক্রান্ত শুনানি।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ- ডি, গ্রুপ-সি,নবম- দশম ও একাদশ-দ্বাদশে দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালে সিবিআই ও ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তি প্রসাদ সিনহা, অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়রা। দীর্ঘ ২ বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি রয়েছেন অনেকেই। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ এই আধিকারিকরা কেউ পেশায় ছিলেন কলেজের অধ্যাপক,কেউবা অধ্যক্ষ আবার কেউবা শিক্ষা দফতরের কর্মী। কিন্তু রাজ্যের প্রাথমিক থেকে একেবারে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ দুর্নীতির বড়সড় চক্র প্রকাশ্যে এসেছে কলকাতা হাইকোর্টের তদন্তের নির্দেশের পর।
প্রথমে ২০১৮ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-ডি ও গ্রুপ - সি পদে প্রার্থীদের প্যানেলের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির ইঙ্গিত পায় সিবিআই। পরে আর্থিক লেনদেনের ঘটনা সামনে আসায় তদন্ত যায় ইডিরও হাতে।
তদন্তের নামে বছরের পর বছর এভাবে আটকে রাখা ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত স্বাভাবিক ন্যাচারাল জাস্টিসের বিরোধী। ন্যায়ের পরিপন্থী। সিবিআই এঁদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ করলেও রাজ্যের অনুমতি না মেলায় চার্জ ফ্রেম করে এখনও বিচারপর্ব শুরু করতে পারেনি। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে টানাপড়েন চলেছিল। কেন এতদিনেও অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যসচিব কনসেন্ট সংক্রান্ত পদক্ষেপ করেননি, শুনাননিতে প্রশ্ন তুলেছিল বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলাকারীদের তরফে বলার চেষ্টা করা হয়, জামিনের আবেদনকারীদের প্রায় সকলেই প্রবীণ নাগরিক। আদালতের বক্তব্য , 'দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁরা সিনিয়র সিটিজেন আর প্রতারিতরা সকলেই যুবা!' আইনজীবীরা সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কনসেন্ট আদায়ের ক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে না পরায়। মামলাকারীদের আইনজীবীদের কাছে আদালতের পাল্টা প্রশ্ন, 'যদি না সরকার ধৃত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেমের ক্ষেত্রে সম্মতি দেয়, তাহলে আদালত বা সিবিআই কী করতে পারে! আদালত নিজে থেকে কনসেন্ট দেওয়ার কথা বলবে না'। দীর্ঘদিন শুনানির পর মামলার রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপুর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজেশ সাহা, মানস নস্কর