SSKM উডবার্ন ২-এর বেড ভাড়াকলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শুরু হতে চলেছে রাজ্যের প্রথম হাড়ের ব্যাঙ্ক। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই হাড়ের ব্যাঙ্ক চালু হলে দুর্ঘটনা, হাড়ের ক্যান্সার বা অন্য কারণে হাড় হারানো রোগীদের পুনর্গঠনমূলক অস্ত্রোপচারে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক পক্ষকালের মধ্যেই এই ব্যাঙ্ক আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। মূল উদ্দেশ্য হল, বিভিন্ন অস্ত্রোপচার বা আঘাতের ফলে শরীর থেকে অপসারিত হাড় জীবাণুমুক্ত করে সংরক্ষণ করা, যাতে তা পরবর্তীতে হাড় প্রতিস্থাপন বা পুনর্গঠনমূলক সার্জারিতে ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে এসব হাড় জৈব চিকিৎসা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা চালু হলে সেই হাড় জীবাণুমুক্ত করে বিশেষ শীতল রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষিত থাকবে। মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বজায় রাখতে সক্ষম দুটি উন্নতমানের ফ্রিজ ইতিমধ্যেই বসানো হয়েছে।
এসএসকেএম হাসপাতালের পরামর্শদাতা অর্থোপেডিক অঙ্ক সার্জন ড. কৌশিক নন্দী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'দুর্ঘটনায় অঙ্গ হারানো কিংবা হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পুনর্গঠনই একমাত্র বিকল্প। এই হাড়ের ব্যাঙ্ক থাকলে জৈবিক টিস্যু ব্যবহার করে হাড় পুনর্গঠন সম্ভব হবে, যা কৃত্রিম উপাদানের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।'
তিনি আরও জানান, জীবাণুমুক্ত হাড় একবার সংরক্ষিত হলে তা পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য থাকবে। মস্তিষ্ক-মৃত দাতাদের কাছ থেকেও হাড় সংগ্রহ করা হবে, যদি তাঁদের কোনো সংক্রামক রোগ না থাকে। হৃদযন্ত্র বা কিডনির মতো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে যেখানে রক্তের গ্রুপ মেলাতে হয়, সেখানে হাড় প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সেই প্রয়োজন নেই, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করবে।
এছাড়া, নিতম্ব বা হাঁটু প্রতিস্থাপন করানো জীবিত রোগীরাও চাইলে তাঁদের অস্ত্রোপচারে অপসারিত হাড় ব্যাঙ্কে দান করতে পারবেন।
চিকিৎসক মহল এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। মণিপাল হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ড. রাজীব বসু বলেন, 'এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জৈবিক হাড়ের টিস্যু শরীরের সঙ্গে ধাতব ইমপ্লান্টের তুলনায় অনেক ভালোভাবে মানিয়ে যায়। এতে রোগীর আরোগ্যও দ্রুত হয়।'
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে হাড় জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিকভাবে এই ব্যাঙ্কের সংরক্ষিত হাড় শুধুমাত্র এসএসকেএম হাসপাতালের রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হবে। ভবিষ্যতে রাজ্যের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালেও এই সুবিধা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।