RDX ব্যবহার করা হয়েছে। দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ নিয়ে এমনই গুরুতর অভিযোগ তুললেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দাবি করেন, 'এই কারখানা চালাত যারা, তারা সকলে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। আজ একটু পরেই বিজেপির ৩০-৪০ জন MLA যাবে জানার পরেই গ্রেফতারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রাই তো জানিয়েছে, এই অভিযুক্ত শফিক আলি তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত।'
তিনি বলেন, 'স্থানীয়রা বলছে, প্রত্যেক দোকান থেকেই রথীন ঘোষ প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে নিত। মুর্শিদাবাদ, মালদা সহ বিভিন্ন স্থানে বোমা যেত। প্রাক্তন মন্ত্রী, বিধায়ককে জাকির হোসেনকে যে স্প্লিন্টার দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটাও এখান থেকে গিয়েছিল।'
এরপর তিনি সরকারের পদত্যাগের দাবি তোলেন। তিনি বলেন, 'আমরা মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। NIA তদন্ত শুরু করুক। মুখ্যমন্ত্রী যে বাজি কারখানা সরিয়ে মানুষের জীবন ঠিক করা । সরকারের স্টেটমেন্ট চাই।'
বিধানসভা মুলতুবি প্রস্তাবের উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিধানসভা মুলতুবি করা হবে। স্লোগান দেওয়া হবে। ভারতীয় জনতা দল সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
NIA তদন্ত হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেন, 'সেকশন৩/৪ থাকলে তবেই এনআইএ হয়। এখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি এনআইএ তদন্ত আরোপ করতে পারে না। আজ সকালেই আমরা হাইকোর্টে PIL করেছি। গ্রহণ করেছেন প্রধান বিচারপতি। আগামিকাল সম্ভবত মামলার শুনানি। আশা করছি NIA-র হাতে এই মামলা যাবে।'
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টে এই ঘটনায় সিবিআই ও NIA-এর হাতে তদন্ত ভার তুলে দেওয়ার দাবি করেছে বিজেপি।
শুভেন্দু বলেন, এনআইএ তদন্তেও রাজ্য সরকারের তরফে বাধা মিলতে পারে। তিনি দাবি করেন, '২০২১ সালের পর থেকে খেজুরি, ভগবানপুর, কালীয়াচক, রামনবমী মিছিলে শিবপুর, রিষড়া এবং ডালখোলার ঘটনায় প্রশাসন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছেন এনআইএ তদন্ত আটকানোর জন্য।' এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, 'তাঁর কাছে বক্তৃতা করা ও কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটাই অগ্রাধিকার। কেন্দ্রকে আক্রমণ করাই তাঁর মূল লক্ষ্য।'
তিনি বলেন, 'এগরা থেকে শুরু করে মিজোরামের পরিযায়ী শ্রমিক, আর এখন দত্তপুকুর। সবেতেই সঠিক পদক্ষেপ নিতে উদাসীন সরকার। রাজ্যপাল সন্ধ্যায় অন্ধকারে নেমে আবার চলে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী যাচ্ছেন না।'
এরপর শুভেন্দু বলেন, 'কালই ৫০ জন এমএলএ চলে যেতে পারতাম। কিন্তু গতকালের কাজ ছিল পুলিশ, দমকলবাহিনী ও ফরেন্সিকের। তাই আমরা যাইনি। বিজেপির বিধায়করা বিধানসভার গেট থেকে দুপুর ১টায় বিক্ষোভ শুরু করবেন।'
দত্তপুকুরে বাজি কারখানা বিস্ফোরণে ক্রমেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সোমবার আরও এক দেহ উদ্ধার হল। এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেহাংশ। বিস্ফোরণের তীব্রতায় গোটা এলাকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা কত দাঁড়াবে, তাই নিয়ে নিশ্চিত নয় প্রশাসন। গতকাল উদ্ধার হওয়া এক ব্যক্তির হাসপাতালে মৃত্যু হয়।
চারপাশে গাঁ ঘেষে বাড়ি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তার মধ্যেই দত্তপুকুরের এই দোতলা বাড়িতে চলছিল বাজি তৈরির কারবার। রবিবার সকালে ভয়াবহ বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আশেপাশের বাড়িগুলো ভেঙে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের চোখের সামনেই এই বেআইনি বাজি কারখানা চলছিল। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা এই বাজি কারখানার সঙ্গে জড়িতদের বাড়ি ও কর্মশালায় তল্লাশি চালান। সেখান থেকে বিকার, টেস্টটিউব ইত্যাদি মিলেছে। আর তারপরেই প্রশ্ন উঠেছে, বাজি তৈরি করতে এগুলি আদৌ প্রয়োজন কিনা।