'ডিম্ভাত'- তৃণমূল কংগ্রেসের মিটিং-সমাবেশ হলেই এই শব্দ ঘুরে ফিরে চলে আসে বাংলার রাজনীতিতে। করোনা আবহে এবার ভার্চুয়ালি একুশের সভা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে ধর্মতলায় হচ্ছে না প্রকাশ্য সভা। নেই লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি। তাঁদের খাবারের আয়োজনও হয়নি স্বভাবিকভাবেই। তাই মিসিং 'ডিম্ভাত'-ও।
বাংলার রাজনীতিতে কবে থেকে এল 'ডিম্ভাত'
২০১১ সালে বাংলায় প্রথমবার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর তাদের তরফে একাধিক সভা করা হয়েছে। মহা-সমারোহে পালিত হয়েছে একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসও। সেই সভা সমাবেশে যোগ দেওয়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের খাওয়ার আয়োজনও করত শাসকদল। মেনুতে থাকত, ডিমের ঝোল ও ভাত। 'ডিম্ভাত'- এই শব্দের উৎপত্তির বীজ বোনা হয়েছিল সেখানেই।
তবে ২০১১ সাল থেকেই 'ডিম্ভাত' প্রচলিত শব্দ হয়ে উঠেছিল, তা নয়। এই শব্দ বহুলভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে ২০১৯ সালের পর থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকী রাজনীতি যাঁরা করেন না, তাঁরাও রসিকতা করেন এই শব্দের ব্যবহার শুরু করে। তৃণমূলের সভা-সমাবেশের সঙ্গে যেন সমার্থকভাবে জুড়ে যায় 'ডিম্ভাত'।
২০১৯ সালের ঠিক কবে এই 'ডিম্ভাত' প্রথম সামনে আসে, তা জানা সম্ভব নয়। তবে এই নেপথ্যে রয়েছে একটি দেওয়াল লিখন। ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেড ময়দানে BJP বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে এক সমাবেশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সমাবেশের আগে দেওয়াল লিখন হয়েছিল। কোনও একটি দেওয়ালে লেখা ব্রিগেড যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে নীচে ছোটো করে লেখা ছিল, মেনু- ডিম্ভাত। সেই ছবি তুলে কেউ তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দেন। আর তা ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হতে শুরু করে। সেই থেকে পথ চলা শুরু 'ডিম্ভাত'-এর।
এই 'ডিম্ভাত' এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, BJP থেকে বাম- সব দলগুলি 'ডিম্ভাত'-কে হাতিয়ার করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে আক্রমণ করতে শুরু করেন। দিলীপ ঘোষ যেমন তৃণমূলে একটি সভার পর বলেছিলেন, 'ওদের সভায় এবার লোক হয়নি। ডিম্ভাত নষ্ট হয়েছে।'
'ডিম্ভাত'- এর আগে ছিল 'মাছভাত'
৩৪ বছরের বাম শাসনকালে ব্রিগেডে সমাবেশ করত বামপন্থীরা। তাদের মেনুতে থাকত 'মাছ-ভাত'। এই মেনু নিয়েও কম মজা রসিকতা হয়নি। সেই সময় অনেকে রসিকতা করে বলতেন, 'মার্ক্সবাদ' নয়, গ্রামবাংলা থেকে মানুষ ব্রিগেডে যোগ দিতে আসে 'মাছভাতে'র লোভে।
তবে 'ডিম্ভাত'- এর মতো অতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি এই মাছ-ভাত। তার কারণ সোশ্যাল মিডিয়া। বামেদের সময় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এখনকার মতো শক্তিশালী ছিল না। তাই ভাইরালও হওয়ার সুযোগ পায়নি 'মাছ-ভাত'।