লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল শেষ পর্যন্ত জোটের পথে হাঁটবে কি না এই নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজনীতির দরবারে। ক'দিন আগেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'একলা লড়াইয়ের' বার্তা দিয়েছিলেন। তার পাল্টা 'মমতা জোট চান না' বলে সরব হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। যা ঘিরে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই আবহে শনিবার তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল যে, কংগ্রেসের জন্য তারা দরজা খোলা রাখছে। আবার, যদি রফা না হয়, তা হলে একলা লড়তেও যে তারা তৈরি, সে বার্তাও দিল ঘাসফুল শিবির।
শনিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা আসন সমঝোতা নিয়ে যা বলছেন, তা অবাস্তব। কারণ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।' তাঁর কথায়, 'আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বলেছেন যে, কংগ্রেসের জন্য আমাদের খোলা হৃদয়। এখন ওরা কী করবে, সেটা ওদের ব্যাপার। পশ্চিমবঙ্গে হবে কি না (জোট) তা সনিয়া গান্ধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবেন। স্থানীয় নেতারা যা ভাবছেন, তা অবাস্তব।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের অন্য এক নেতা জানিয়েছেন, বাংলায় জোটে সায় রয়েছে তৃণমূলের। তবে প্রয়োজনে একলা লড়াই করতেও প্রস্তুত। সূত্রের খবর, বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেসকে ৪টি আসন ছাড়ার কথা ভাবছে জোড়াফুল শিবির।
২০২৪ সালের নির্বাচনে মোদী বাহিনীকে হঠাতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিরোধী নেতারা। তৈরি হয়েছে বিজেপি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'। গত বছরের শেষ দিকে দিল্লিতে শেষ বৈঠক হয়েছে জোটের। আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে বিরোধীদলগুলির মধ্যে। এই আবহে বাংলায় আসন রফা হবে কি না, সে নিয়ে প্রথম থেকেই চর্চা চলছে। এর মধ্যেই সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় কর্মিসভায় বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'সারা দেশে থাকবে ইন্ডিয়া। বাংলায় তৃণমূল লড়াই করবে। তৃণমূলই বিজেপিকে শিক্ষা দিতে পারে। সারা দেশকে পথ দেখাতে পারে। অন্য কোনও দল নয়।' মমতার এ হেন মন্তব্য ঘিরেই রাজনীতির ময়দানে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, লোকসভার লড়াইয়ে বাংলায় একাই লড়তে চায় তৃণমূল। আসন সমঝোতার প্রশ্নে মমতা আগেই জানিয়েছেন, রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, তারাই জোটে মুখ্য ভূমিকা পালন করুক। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সেই বার্তাই ফের দিতে চেয়েছেন মমতা। অর্থাৎ জোট হলেও তার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবে বাংলার শাসকদল। অতীতে মোদী বাহিনীকে হঠাতে মমতাকে সামনে রেখে এগোনোর বার্তা দিয়েছিল তৃণমূল। এমনকী, ২০২১ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের সাফল্যের পর মমতাকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেছিল জোড়াফুল শিবির। আবার, বিজেপিকে হারাতে যে তৃণমূলই পারবে, সেই বার্তাও বারবার দিয়েছে মমতার দল। কংগ্রেসকে নিশানা করে অতীতে তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, বিজেপিকে হারাতে ব্যর্থ কংগ্রেস। তাই মমতার মন্তব্য কংগ্রেসকে খানিকটা 'চাপে রাখার কৌশল' বলেও মনে করছেন অনেকে।
মমতার এই মন্তব্যের পর অধীর বলেছিলেন, 'মুর্শিদাবাদে তৃণমূলকে বার বার হারিয়েছি, মালদহে হারিয়েছি। আমরা বলছি না, সারা বাংলা দখল করব। যেখানে কংগ্রেস আছে সেখানে লড়বে, জিতবে। আমরা লড়েছি, লড়ছি, লড়ব।' এর পরই মমতাকে নিশানা করে অধীর বলেছেন, 'দিদি সব জায়গায় ঠিক করছে মোদীর বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবেন। এই নাটক দেখতে আমরা অভ্যস্ত। মাথা মুণ্ড নেই। বাংলায় কংগ্রেস তার মতো করে লড়ছে। দিদিই জোটের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন। দিদি নিজেই জোট চান না। কারণ অসুবিধা আছে। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। বাংলায় কংগ্রেস নিজের লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি। কে এল, গেল, যায় আসে না।' গত বৃহস্পতিবার মমতাকে নিশানা করে অধীর ফের বলেন, 'আমরা কারও কাছে ভিক্ষে চাই না। আমরা মমতার দয়া চাই না। আমরা একাই ভোটে লড়তে পারি।'
আসন সমঝোতার প্রশ্নে সম্প্রতি মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী জানিয়েছিলেন যে, মালদা দক্ষিণ এবং বহরমপুর আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছেন মমতা। তার পরেই একলা লড়াই নিয়ে ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করেন মমতা।
অতীতে ২০০১ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছিল তৃণমূল। পরে ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচন এবং ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের হাত ধরেছিল বাংলার বর্তমান শাসকদল। এখন দেখার, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে আবার দু'দলের জোট হয় কি না।