রাজ্যপাল বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সংঘাত, এবার মনে হচ্ছে এক চূড়ান্ত জায়গায় এসে উপনীত হয়েছে। একে বলা যেতে পারে 'পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন'। রাজ্যপালের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে কোনও ফল তো হয়নি।
রাজ্যপাল প্রতিদিন নানা রকম বিষয়ে টুইট করছেন, বিরোধিতা করছেন, এমনকী বিধানসভায় আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করেই তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী সংবিধান জানেন না এবং তিনি সাংঘাতিক ভাবে সংবিধানের বিকৃতি ঘটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক প্রস্তাব নিয়ে আসবে। আর শুধু বিধানসভায় নয়, রাজ্যসভাতেও এই প্রস্তাব আনা হবে।
প্রথম কথা হচ্ছে, বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। সুতরাং, সেদিক থেকে কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু এই প্রস্তাব কি আনা যায়? এটা নিয়ে বিজেপি গোলমাল তো নিশ্চয়ই করবে। এছাড়া বিজেপি বিরোধিতা করে বলবে যে, এটা আনা যায় না।
রাজ্যপালের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থেকেও বেশি –এমন একটা যুক্তি রাজ্যপালের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সংবিধানে লেখা আছে, রাজ্যপালের একটি সক্রিয় ভূমিকা নাকি আছে, যেটার সবটাই ক্যাবিনেট নির্ভর নয়। সংঘাতের পরিবেশে রাজ্যসভাকে বাছা হয়েছে লোকসভার জায়গায়। তার কারণ, বিজেপির লোকসভাতে সংখ্যা গরিষ্ঠতা আছে, সেটা রাজ্যসভায় নেই। সুতরাং, কোনোভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে মবিলাইজ করে, যদি এই সূত্রে জেতা যায় তার চেষ্টা কিন্তু মততা বন্দ্যোপাধ্যায় করবেন।
এখানে একটা কথা বলার যে বিভিন্নভাবে রাজনীতির রং এসে লাগে। কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, রাজ্যপাল বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ে আপাতত ধাপে ধাপে এগোচ্ছে তৃণমূল। প্রথম স্ট্র্যাটেজিটা হচ্ছে, সরকার বিরোধিতা না করলেও দলের পক্ষ থেকে রাজ্যপালের বিরোধিতা করা হবে। আর তাদের প্রধান আক্রমণের লক্ষ্য 'লিডার অফ দ্য অপজিশন' নয়, মূল লক্ষ্য হল রাজ্যপালকে কী করা হবে। এখন রাজ্যপালকে যদি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে ২০২৪ এর আগে বিরাট ভাবে রাজনীতির লড়াইটা এসে যাবে।
এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখবেন যে, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কংগ্রেস এবং সিপিএম কী করে? বিধানসভায় এবং রাজ্যসভাতে নিয়ে এলেও অন্যান্য অ-বিজেপি দলগুলো কী ভূমিকা নেয়? এমনকী কংগ্রেস যদি এই ইস্যুতে তৃণমূলের পাশে না থাকে তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসও কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাবে। তার কারণ তারা বলবে, কংগ্রেস আমাদের পাশে থাকছে না। সুতরাং, এই ইস্যুটা নিয়ে জলটাও কিন্তু মাপবে তৃণমূল কংগ্রেস।