পশ্চিম মেদিনীপুরের বাংলাদেশি কলোনিরাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে SIR। মঙ্গলবার, ৪ নম্বর থেকে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি করতে শুরু করেছেন বিএলওরা। যাঁদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে বা যাঁদের নিকট আত্মীয়দের নাম রয়েছে তাঁরা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই নিশ্চিন্ত। কিন্তু যাদের নেই তাঁদেরই বিস্তর চিন্তা ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে মাথায়। আর এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে অস্বস্তি শুরু হয়েছে যে সমস্ত এলাকা বা কলোনি বাংলাদেশি বলে পরিচিত।
এই সমস্ত বাংলাদেশি কলোনিতে বিজেপির পাশাপাশি এবার যেতে শুরু করল তৃণমূল। বিজেপি এই সমস্ত এলাকায় গিয়ে বলছে ভোটার তালিকায় নাম না থাকলেও কোনও চিন্তা নেই। CAA-এর মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এরপর ভোটার তালিকায় নাম উঠে যাবে। আর তৃণমূল বলছে, শুধুমাত্র বিএলওরা যে এনুমারেশন ফর্ম দেবেন সেটাই ভর্তি করা জমা দেবেন। আর কোনও ফর্ম ফিলআপ করবেন না। বলা ভাল এ যেন একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যের দুই যুযুধান শিবিরের মধ্যে।
এই ছবি ধরা পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের খাসপাড়া এলাকায় বাংলাদেশিদের বসবাস। মেদিনীপুর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডে জাতীয় সড়কের পাশে প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি পাড়া তৈরি হয়েছিল। মূলত বহিরাগতরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে খাস জায়গাতে বসবাস শুরু করেছিলেন। দু'দশকের বেশি সময় ধরে বসবাস করার পর সেখানেই ধীরে ধীরে পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন। ছোটখাটো ব্যবসা কিংবা শ্রমিকের কাজ করে এরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
সোমবার সকালে এই পাড়াতেই হাজির হয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে আশ্বাস দিয়েছিলেন- "এলাকায় ক্যাম্প করে সিএএ ফর্ম দেওয়া হবে। সেই ফর্ম পূরণ করে জমা দিলে বাকি কাজ বিজেপি করে দেবে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য।" সকলকে অভয় দিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। জানিয়েছিলেন পাড়াতে শীঘ্রই ক্যাম্প হবে ৷
এরপর ওই পাড়াতেই হাজির হলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা তৃণমূলের বিধায়ক সুজয় হাজরা সহ তৃণমূলের বিভিন্ন কাউন্সিলর, জনপ্রতিনিধি নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকালেই আগের দিনের যে সমস্ত বাড়িতে বিজেপি নেতারা কথা বলেছিলেন, তাদের কাছেই গিয়ে আশ্বাস দিলেন কোনরকম বিজেপির বিভ্রান্তিতে পা দেবেন না। বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দিলেই বাংলাদেশী হতে হবে। তাই সিএএ ফর্ম পূরণ না করে সরকারি আধিকারিকদের দেওয়া এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করুন। আপনাদের বৈধতা দেবে রাজ্য সরকার। ফলে নতুন করে দুই রাজনৈতিক দলের প্রতিযোগিতায় ধন্দে পড়লেন বাংলাদেশি ওই বাসিন্দারা ৷ তবে বিজেপি জানিয়েছিলেন শীঘ্রই বাংলাদেশীদের ওই কলোনিতে সিএএ ক্যাম্প করা হবে , তার পাল্টা শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে বুধবার থেকেই শুরু হচ্ছে হেল্প ডেস্ক ৷
সব মিলিয়ে শাসক-বিরোধী শিবিরের এই তৎপরতা ঘিরে বেশ খানিকটা ধন্দেই পড়ে গিয়েছেন মেদিনীপুর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের খাসপাড়ার বাসিন্দারা। দু'দশক ধরে এলাকায় বসবাস করার পর হঠাৎ করে যদি তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয় তাহলে কী হবে, এটা ভেবেই অজানা আতঙ্ক গ্রাস করছে তাঁদের।