Private Hospital Bill Regulation: বেসরকারি হাসপাতালের বিলে লাগাম টানতে কড়া রাজ্য, বিল পাশ বিধানসভায়

বিধানসভায় পাশ হল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট সংশোধনী বিল। রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আকাশছোঁয়া বিলে লাগাম টানাই এর মূল উদ্দেশ্য। সোমবার বিধানসভায় বিল পেশ করেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার, ২ দিনের আলোচনার পর ভোটাভুটিতে বিল পাশ হয়।

মঙ্গলবার বিল নিয়ে আলোচনায় বিজেপি বিধায়করা যোগ দেন। অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, তাঁর মতে সংশোধনী বিলে মহিলা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়নি। অথচ এই বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি।

শুভেন্দু অধিকারীর আরও বক্তব্য, বিলের প্যাকেজ সংক্রান্ত অংশে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য বেঁধে দেওয়া খরচের বাইরে অতিরিক্ত টাকা চাইলে রোগীর আত্মীয়দের তা আগে জানাতে হবে। তাঁর যুক্তি, কিছু মানুষের পক্ষে সেই প্যাকেজের মধ্যেও চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে না। তখন সেই দায় কার, তা স্পষ্ট নয় বলেও দাবি শুভেন্দুর। পাশাপাশি তিনি বলেন, প্রতিটি প্যাকেজ সরকারি পোর্টালে প্রকাশ করা উচিত। এর ফলে সাধারণ মানুষ আগেভাগে সমস্ত হাসপাতালের রেট যাচাই করে নিতে পারবেন।

অন্যদিকে, বিলের পক্ষে যুক্তি দিয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, এই বিলের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হবে যে, রোগী ভর্তি হওয়ার পর কোনও গোপন খরচ চাপানো যাবে না। বাড়তি দিন হাসপাতালে থাকলেও তার জন্য খরচের স্পষ্ট হিসাব দিতে হবে।

বিজেপির তরফে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বিলটির আরও সংশোধনের প্রস্তাব দেন। তাঁর একাধিক সংশোধনী খারিজ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিলটি পাশ হয়। এরপর নিয়মমাফিক এটি অনুমোদনের জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে। তাঁর সম্মতির পরই সংশোধনীগুলি আইনে পরিণত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বেসরকারি হাসপাতালকে সম্পূর্ণ রেট চার্ট প্রকাশ করে রাখতে হবে। সেই তালিকা এমনভাবে রাখতে হবে যাতে তা সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে। প্রয়োজনে একাধিক ভাষায় তা লেখা থাকতে হবে।

এই বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক ডা. রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। রোগীসেবা যেখানে মুখ্য, সেখানে বাণিজ্যিক মানসিকতা কাম্য নয়। সরকারের এই পদক্ষেপে মানুষের আস্থা বাড়বে।

অনেক সময় রোগী ভর্তি হওয়ার সময় নির্দিষ্ট প্যাকেজে সম্মতি জানালেও, ছাড়পত্র পাওয়ার সময় দেখা যায় বিল কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। বিমা সংস্থাগুলিও অতিরিক্ত এই খরচ মেটাতে রাজি হয় না। রোগীর পরিজনরা বাধ্য হন সেই টাকা দিতে। এই অব্যবস্থা বন্ধ করতেই এই বিল পেশ রাজ্য সরকারের। 

উডল্যান্ডস হসপিটালের ম্যানাজিং ডিরেক্টর ও সিইও এবং অ্যাসোশিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া জানান, 'এটি অত্যন্ত ভাল পদক্ষেপ। প্রাইভেট হাসপাতাল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে কিছুটা হলেও ধোঁয়াশা রয়েছে, সেক্ষেত্রে এই উদ্যোগ খুব কাজে দেবে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে না। প্যাকেজ স্পষ্ট করে দেখানোটাও ভাল নিয়ম। তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, চিকিৎসা বিষয়টি প্রত্যেকের জন্য আলাদা ধরনের হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে প্যাকেজ হয় তো এক রাখাও যাবে না। কিন্তু যেটাই হোক, আমাদের বিষয়টি যেন রোগীর বাড়ির লোককে সঠিকভাবে বোঝানো হয়, প্যাকেজের বেশি কেন খরচ, তা যেন সুস্পষ্টভাবে বোঝানো হয়, সেই বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে, যাতে কোনও ভুল বোঝাবুঝির জায়গা না তৈরি হয়।'