সন্দেশখালির 'বেতাজ বাদশা' শেখ শাহজাহান কোথায় রয়েছেন? এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। বৃহস্পতিবার রাজ্যের মন্ত্রী দাবি করলেন, 'শেখ শাহজাহান অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য বাইরে রয়েছেন।' তবে ঠিক কোথায় রয়েছেন শাহজাহান, তা স্পষ্ট করেননি কারামন্ত্রী। শুধু বলেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে নেই।' মন্ত্রীর দাবি, 'পুলিশ খুঁজছে। রাজ্যের মধ্যে থাকলে তো খুঁজে পেত।' সন্দেশখালিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শাহজাহান। ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা তিনি। কেন শাহজাহানকে পুলিশ ধরছে না, সেই নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের বিরোধীদলগুলি। এই আবহে শাহজাহান প্রসঙ্গে কারামন্ত্রীর এ হেন দাবি এই পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করল।
ঠিক কী বলেছেন কারামন্ত্রী?
শেখ শাহজাহানকে নিয়ে রহস্যের মধ্যেই অখিল গিরি বলেছেন, 'শেখ শাহজাহান চিকিৎসার জন্য বাইরে কোথাও গিয়েছেন। সে অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছেন। অপরাধীকে ছাড়া হবে না। পুলিশ খুঁজছে। রাজ্যের মধ্যে থাকলে তো খুঁজে পেত।' কোথায় রয়েছেন শাহজাহান? এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, 'কোথায় আছেন জানি না। তবে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে নেই।' শাহজাহান আত্মসমর্পণ করবেন কিনা এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেছেন, 'আত্মসমর্পণ করবেন কি না, সেটা তাঁর ব্যাপার।' আগামী ২৯ জানুয়ারি শাহজাহানকে তলব করেছে ইডি। এই প্রসঙ্গে অখিল জানিয়েছেন, অসুবিধা থাকলে উনি বলবেন। অনেক ক্ষেত্রে তো অন্য সময় চাইলে দেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, 'রাজ্যের মন্ত্রী দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলছেন। পুলিশ-প্রশাসন কিসের জন্য আছে। শেখ শাহজাহান মুখ্যমন্ত্রীর সংরক্ষণে আছেন। রাজ্যের বাইরে না রাষ্ট্রের বাইরে আছেন, তা পরিষ্কার হওয়া দরকার।'
তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, 'কিসের উপর ভিত্তি করে অখিলবাবু এই মন্তব্য করেছেন জানি না। দলের কোনও মন্তব্য নেই।'
কী ঘটেছিল সন্দেশখালিতে?
গত ৫ জানুয়ারি সকালে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেয় ইডির একটি দল। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে এই অভিযান বলে খবর। সরবেড়িয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়ির দিকে ইডির আধিকারিকরা যাওয়ার চেষ্টা করলেই রুখে দাঁড়ান বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁরা শাহাজাহানের অনুগামী বলে দাবি। শাহাজাহানের বাড়িতে ডাকাডাকি করে সাড়া না পাওয়ায় দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন ইডির আধিকারিকরা। অভিযোগ, সেই সময়ই তাঁদের ঘিরে ফেলে মারধর করা হয়। ধাক্কা মেরে সরানো হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। ইডির আধিকারিকদের ধাওয়া করে এলাকা ছাড়া করা হয়। তাঁদের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। ওই সময় তিন আধিকারিক জখম হন। আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যমও।
এই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখনও অধরা শাহজাহান। এর মধ্যেই বুধবার সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে ফের গিয়েছিল ইডির দল। কিন্তু শাহজাহানের হদিস পাওয়া যায়নি। এর পরই শাহজাহানকে ২৯ জানুয়ারি তলব করেছে ইডি। অতীতে শাহজাহানের নামে লুক আউট নোটিস জারি করা হয়েছিল। শাহজাহান প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, 'তদন্ত চলছে। কোনও মন্তব্য করব না।' এর মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী মারফৎ মামলায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন শাহজাহান। পরে অবশ্য তিনি মত বদলান।