scorecardresearch
 

Paschim Bangla Diwas: রাজভবনে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' কেন? কেন্দ্রেরও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত

সেটাও তো একটা মস্তবড় প্রশ্ন। আর আজ বিজেপি কেন এই উৎসব পালন করতে চাইছে প্রতিষ্ঠা দিবসে ? আর শুধুতো বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী নয়, রাজ‍্যপাল রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করতে চলেছেন।

Advertisement
পশ্চিমবঙ্গ দিবস পশ্চিমবঙ্গ দিবস

২০ জুন 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস'। আমরা ছোটবেলা থেকে কখনওই এই দিনটিকে নিয়ে রাজ‍্যে মহাসমারোহে উৎসব পালন করতে দেখিনি। কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। তারপর সিপিএম ক্ষমতায় এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশক সিপিএম ক্ষমতায় ছিল। তারপর তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে রাজ‍্যের মধ্যে একটা উৎসব পালন হয়নি কেন?

সেটাও তো একটা মস্তবড় প্রশ্ন। আর আজ বিজেপি কেন এই উৎসব পালন করতে চাইছে প্রতিষ্ঠা দিবসে? আর শুধু তো বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী নয়, রাজ‍্যপাল রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করতে চলেছেন। এবং ঠিক যেভাবে জগদীপ ধনখড় রাজ‍্যপাল থাকার সময় করেছিলেন। তিনিও সেই পথেই হাঁটছেন। কোনও সন্দেহ নেই তার মানে এটা বিজেপি দল শুধু নয়। কেন্দ্রীয় সরকারেরও এটা একটা পরিকল্পিত এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত।

এবার আসুন, আমরা পশ্চিমবঙ্গ দিবসের পালন এবং না পালন করার কারণগুলি দেখি। 

আরও পড়ুন

১৯৩৭ সালে যখন প্রথম প্রাদেশিক নির্বাচন হয়। এবং সেই সময় মুসলিম লিগ বিপুল ভাল ফল করে। বিভিন্ন এলাকায় পূর্বাঞ্চলে মুসলিমদের আধিপত্য দেখা যায়। তাদের একটা মুসলিম লিগের প্রতি আনুগত্য দেখা যায়। ফজলুল হক মুসলিম লিগে যোগ দিতে চাননি। কিন্তু নেহরু এবং কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধ এবং তাকে স্বীকার না করা, ফজলুল হকের মুসলিম লিগে চলে যাওয়া। এই ঘটনাগুলিরও একটা আশঙ্কা শ‍্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেকেই করেছিলেন। তার ফলে ৪৭' সালে দেশ যখন ভাগ হচ্ছে তখন শ‍্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জোর গলায় বলেছিলেন, হিন্দুদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য বঙ্গটাকে ভাঙা দরকার। তা না হলে মুসলিম এবং হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন আরও বাড়বে। হিন্দুরা নিরাপত্তার অভাববোধে পীড়িত হবে।

শুধু হিন্দু নয়। নমঃশুদ্ররাও কিন্তু সেই সময়ে হিন্দুদের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। বিধানসভায় প্রাদেশিক কমিটি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। বিধান রায়, শ‍্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সমর্থন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ গঠনের ব‍্যাপারে। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটা ঐতিহাসিক একটা অনিবার্যতার মধ্যে দিয়ে বিকশিত হয়। সেই সময় এটা কিন্তু ভাবা হয়নি, এটি হিন্দু বনাম মুসলিম একটা মেরুকরণের রাজনীতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Advertisement

আজ এতবছর পর যেভাবে কর্ণাটক এবং মধ‍্যপ্রদেশে প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয় সেভাবে পশ্চিমবঙ্গে হয় না, তার একটাই কারণ, যেটা বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা বলছেন এবং তৃণমূলের সূত্রও বলছে, তারা এটা করতে চান না। তার কারণ হচ্ছে, দেশভাগটা তো দুঃখের। দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দেশভাগের পর দাঙ্গা হয়েছে। Calcutta Massacre বিখ্যাত এবং ভয়ংকর একটা দাঙ্গার কাহিনি। সুতরাং যেখানে মানুষের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা জড়িয়ে রয়েছে, সেখানে এটি সেলিব্রেট করার কারণটা কী থাকতে পারে! কিন্তু একটা নতুন রাজ‍্য গঠন হল এবং সেখানে হিন্দুদের সুরক্ষিত করার জন্য হয়েছিল। এই যুক্তিতে এখন বিজেপিরা নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে এই ধারণাটাকে। এই বিতর্কটা নতুন করে চাড়া দিয়েছে যখন পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ডামাডোল চলছ, এখন এটাই দেখার যে সাধারণ মানুষের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের কর্মসূচি, যেমন শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুরে তার নিজের জেলায় এই উৎসব পালন করবেন ঠিক করেছেন। তিনি সচেতনভাবে, সুপরিকল্পিত ভাবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আশীর্বাদ নিয়েই এপথে এগোচ্ছেন।

এখন এই পরিস্থিতিতে এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটাই দেখার। সিপিএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস তারা কেউই কিন্তু বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে একই ভাবে এটা নিয়ে কোনও মহোৎসব পালনের কর্মসূচি নেওয়ার পক্ষে নয়।  তৃণমূল কংগ্রেস বা সিপিএম এই ব‍্যাপারটাকে কিছুটা এড়িয়ে যেতে চাইছে। বিষয়টার মধ্যে ঢুকতে চাইছে না। এটাকে নন ইস্যু করে দিতে চাইছে। এখন এটাই দেখার একটা বিষয় ইস্যু হবে না নন ইস্যু হবে। সেটা রাজনৈতিক দল ঠিক করবে না সাধারণ মানুষ ঠিক করবে, সেটাই এখন দেখার।

Advertisement