পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বারবার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার প্রয়োজন মনে করেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। তবে সেই দলের নেতার মুখেই হঠাৎ আবার অন্য সুর। বাগডোগরায় দলের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়াই বিজেপি জিততে পারে বলে দাবি করেছেন। আর শুভেন্দুর সেই বক্তব্য নিয়েই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর জল্পনা। হঠাৎ কেন এমন মন্তব্য করলেন বিরোধী দলনেতা?
কী বললেন শুভেন্দু?
এই বিজেপি নেতা বলেন, 'রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার প্রয়োজন নেই বিজেপির। মানুষই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনবে।'
অর্থাৎ বার্তা খুবই স্পষ্ট। বিজেপি আর রাষ্ট্রপতি শাসনের অপেক্ষা করে না। বরং নিজের পায়ে ভর রেখেই ভোটে জিতে আসার ক্ষমতা রাখে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উপর তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
হঠাৎ কেন ১৮০ ডিগ্রি উল্টো কথা বলছে বিজেপি?
আসলে শুভেন্দুর মুখের কথা কোনওভাবেই ব্যক্তিগত নয়। বরং এটা দলেরই ভাবনার প্রতিফলন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। এখন প্রশ্ন হল, যেই বিজেপি ২০১৯, ২০২১, ২০২৪ ভোটের আগে বারবার বঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু করার কথা বলেছে, তারা এখন অন্য কথা বলছে কেন? তার পিছনে দুটি দিক থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন ধরুন-
১. প্রথমত, বঙ্গে এ বার এসআইআর হচ্ছে। যার ফলে এখানে অনুপ্রবেশকারী মুসলিম এবং রোহিঙ্গাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে ১ থেকে ১.২ কোটি নাম ভোটার লিস্ট থেকে বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাদের পক্ষে দাবি। আর এই সমস্ত অবৈধ ভোটার আদতে তৃণমূলের রসদ। এদের জোরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট জেতে বলেই তাদের মত। আর সেই ভোট ব্যাঙ্কে আঘাত এলে যে বিজেপি ভোট যুদ্ধে অনেকটাই এগিয়ে যাবে, সেটাই মনে করছে হয়তো গেরুয়া শিবির। তাই তারা এখন রাষ্ট্রপতি শাসন চাইছে না।
২. বিজেপি এটা ভালোই বুঝেছে যে পশ্চিমবঙ্গে এখন মানুষের নির্বাচিত সরকার চলছে। যার ফলে জনগণ রাষ্ট্রপতি শাসন না মেনে নিতেই পারে। তৈরি হতে পারে 'সিমপ্যাথি'। সাধারণ মানুষ গিয়ে ভোট দিতে পারে তৃণমূলে। এমনকী বিজেপি সমর্থকরাও রেগে গিয়ে, তৃণমূলের দিকে যেতে পারে। আর এমনটা হোক চাইছে না বিজেপি। যার ফলে তারা এখন বিধানসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রপতি শাসন চাইছে না বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।