পাকিস্তানের গতিবিধি এবার বেশ সন্দেহজনক লাগছে। সন্দেহ ও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের একটি বৈঠক ঘিরে। এমন একটি কমিটির আজ অর্থাত্ শনিবার শেহবাজ শরিফ বৈঠক করছেন, যে কমিটি পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ নিয়ে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেয়। পরমাণু অস্ত্রের রাশ রয়েছে পাকিস্তানের এই কমিটির হাতে। কমিটির নাম হল, ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি বা NCA।
পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হল জাতীয় কমান্ড অথরিটি বা সংক্ষেপে NCA। এই সংস্থার হাতে দেশের পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ, কৌশলগত সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নীতিগত দিকনির্দেশনার দায়িত্ব রয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত সব বড় সিদ্ধান্ত এই সংস্থা থেকে নেওয়া হয়।
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (NSC) এই সংস্থাটি তৈরি করেছিল। এর মূল অফিস ইসলামাবাদে অবস্থিত। তৈরি হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু নীতির সবকিছুই এই সংস্থার অধীনে চলে এসেছে।
দেখতে গেলে NCA-র মধ্যে বেসামরিক এবং সামরিক দুই ধরনের প্রতিনিধিত্ব আছে। সংস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ছাড়াও সেনাবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনী ও বায়ুসেনার প্রধান এবং স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন (SPD)-এর প্রধান থাকেন।
কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ জানিয়েছে, কাগজে-কলমে বেসামরিক নেতৃত্ব যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, যুদ্ধকালীন বা কোনো বড় সঙ্কটের সময় পাকিস্তানের সেনাই মূল নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে নেয়।
যখনই NCA কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন বা SPD। অর্থাৎ, পরমাণু অস্ত্রের নীতিমালা তৈরি করে NCA, আর সেটা মাটিতে নামিয়ে আনার কাজ করে SPD।
শুরুর দিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন NCA-র চেয়ারম্যান। কিন্তু ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এই চেয়ারম্যানশিপ ছেড়ে দেন প্রধানমন্ত্রীকে। অনেকে ভেবেছিলেন, এটি হয়তো পরমাণু নীতির বড় কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
কিন্তু বিশ্লেষক জাহিদ হুসেইনের মতে, এটা তেমন কোনও নীতিগত পরিবর্তন নয়, বরং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ফল। বিশেষ করে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (PPP) মধ্যে ক্ষমতার লড়াই এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জারদারির সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরেই এই পরিবর্তন হয়েছিল।
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি সবসময়ই আন্তর্জাতিক রাজনীতির বড় আলোচনার বিষয়। পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন যখন চরমে ওঠে, তখন এই NCA আরও বেশি গুরুত্ব পায়। কারণ, একমাত্র এই সংস্থাই ঠিক করে পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে এগোবে কি না। এই মুহূর্তে পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে উত্তেজনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে NCA-র ভূমিকা ফের খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে।
পাকিস্তানের জাতীয় কমান্ড অথরিটি একদিকে যেমন দেশের পরমাণু অস্ত্রের রাশ টানে, অন্যদিকে তাদের নীতি এবং সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও বড় প্রভাব ফেলে। আপাতদৃষ্টিতে অসামরিক শাসনের ইঙ্গিত থাকলেও, বাস্তবে সেনাবাহিনীর প্রভাবই বেশি দেখা যায় এই সংস্থার ভিতরে। ফলে, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি বোঝার জন্য পাকিস্তানের এই সংস্থার গতিবিধির দিকে নজর রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।