Afghanistan Earthquake 2025: 'পরপুরুষের স্পর্শ নিষেধ', আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে আটকে মহিলারা: রিপোর্ট

কঠোর নিয়মকানুন এবং পূর্বপুরুষদের অন্ধ বিশ্বাস মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা ও জীবনকে রুদ্ধ করে দেয়। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে অচলায়তন নাটকে সেটাই লিখে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এক শতাব্দী পরও তারই প্রমাণ মিলল আফগানিস্তানের মাটিতে।

Advertisement
'পরপুরুষের স্পর্শ নিষেধ', আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপেই আটকে রইলেন মহিলারা: রিপোর্টআফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের মাজার দারায় একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপ।
হাইলাইটস
  • তালিবান সরকারের গোঁড়া ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী, কোনও নারীকে কেবলমাত্র তাঁর বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলেই স্পর্শ করতে পারবেন।
  • উদ্ধারকাজে গিয়েও ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে থাকা মহিলাদের স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকছেন উদ্ধারকর্মীরা।
  • পাশাপাশি, আফগানিস্তানে যে মহিলা উদ্ধারকর্মীর অভাব রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

কঠোর নিয়মকানুন এবং পূর্বপুরুষদের অন্ধ বিশ্বাস মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা ও জীবনকে রুদ্ধ করে দেয়। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে অচলায়তন নাটকে সেটাই লিখে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এক শতাব্দী পরও তারই প্রমাণ মিলল আফগানিস্তানের মাটিতে। সেখানে পরপুরুষদের স্পর্শ নিয়ে নিষেধাজ্ঞার জেরে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের নিচেই আটকে প্রাণ হারাচ্ছেন মহিলারা। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এ যেন অমানবিক উগ্রপন্থার চরমতম নিদর্শন। 

সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে ২,২০০ রও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে তালিবান সরকারের গোঁড়া ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী, কোনও নারীকে কেবলমাত্র তাঁর বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলেই স্পর্শ করতে পারবেন। এর বাইরের কোনও পুরুষের কোনও নারীকে স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। ফলে উদ্ধারকাজে গিয়েও ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে থাকা মহিলাদের স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকছেন উদ্ধারকর্মীরা। কখনও কখনও বাধ্য হয়ে শেষ মুহূর্তে উদ্ধার করা হচ্ছে। ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন একাধিক মহিলা।

ভূমিকম্পে প্রায় মাটিতে মিলিয়ে গিয়েছে বাড়ি।
ভূমিকম্পে প্রায় মাটিতে মিলিয়ে গিয়েছে বাড়ি।

পাশাপাশি, আফগানিস্তানে যে মহিলা উদ্ধারকর্মীর অভাব রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। তালিবান সরকারের ফতোয়ায় মেয়েদের মেডিক্যাল ট্রেনিং, উদ্ধারকাজ, প্রশাসনিক ভূমিকা নিষিদ্ধ। ফলে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মহিলাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখা হচ্ছে। এমনকি মৃতদেরও দেহ বের করা হচ্ছে জামাকাপড় ধরে টেনে। চার বছর ধরে তালিবানের দমননীতি যে আফগানিস্তানের মহিলাদের জীবনের মান আরও তলানিতে নিয়ে গিয়েছে, তা এককথায় বেশ স্পষ্ট।
picture

নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে এই বিষয়ে এক মহিলা মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের এক কোণে জড়ো করে রেখে দিল। তারপর যেন ভুলেই গেল।' কুনার প্রদেশে ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছিলেন বিবি আয়শা নামের ওই মহিলা। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ইট, পাথর, সিমেন্টের চাঁইয়ের নিচে সেভাবেই আটকে পড়েছিলেন। শরীরের একাধিক হাড় ভাঙা, অবিরত রক্তক্ষরণ। প্রায় দেড় দিন পর ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় উদ্ধারকারী টিম। কিন্তু তারপরেও মহিলা আটকে আছে দেখে তাঁকে এড়িয়ে উদ্ধার কাজ চলে বলে অভিযোগ। একাধিক মহিলার এই একই অভিজ্ঞতা। 

৩৩ বছরের স্বেচ্ছাসেবক তাহজিবুল্লাহ মুহাজিব জানালেন, মাজার দারা গ্রামেরও একই ছবি। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মহিলাদের কেউ স্পর্শ করেননি। কিছু কিছু পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক সত্যিই চাইছিলেন মহিলাদেরও উদ্ধার করতে। কিন্তু তালিবান সরকারের কঠোর শাস্তির ভয়ে তাঁরা সাহস পাননি।

Advertisement

অনেক ক্ষেত্রে আশেপাশের গ্রামের মহিলারা এসে মেয়েদের উদ্ধার করেছেন। তবে মেডিক্যাল শিক্ষার অভাব, পুরুষদের অসহযোগিতার কারণে আহতদের সেভাবে সুশ্রষা করতে পারছেন না তাঁরাও।

রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে ২২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।৩৬০০ রও বেশি আহত। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে একের পর এক গ্রাম। 

তালিবান সরকার যদিও ক'জন পুরুষ, আর ক'জন মহিলার মৃত্যু হয়েছে, সেই সংখ্যা প্রকাশ করেনি। কিন্তু চিকিৎসক, উদ্ধার কর্মী ও জীবিতরা বলছেন, নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও বহু জায়গায় ধ্বংসস্তূপের নিচে মহিলারা আটকে রয়েছেন। 

খবরটি ইংরাজিতে পড়ুন: CLICK HERE .

POST A COMMENT
Advertisement