৬০ ঘন্টা বিরতির পর মঙ্গলবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ পুনরায় শুরু হয়েছে। রিপোর্ট বলছে, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। তালিবান-অনুমোদিত সংবাদমাধ্যম আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানি পোস্টে ড্রোন হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সংঘর্ষের ১৫ মিনিটের মধ্যে পাকিস্তানি অস্ত্র দখলের দাবি করেছে আফগান তালিবানরা। একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, আফগান তালিবান বাহিনী দাবি করেছে, তারা সংঘর্ষের মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে পাকিস্তানি পক্ষের অস্ত্র দখল করেছে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭:৪৭ মিনিটে আফগানিস্তানে প্রথম আক্রমণ শুরু করে। পাকতিকা-কুরম সীমান্তে একটি আফগান সেনা পোস্টে কামান হামলা চালান হয়। দ্বিতীয় আক্রমণটি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাকতিকা-কুরম সীমান্তে আরেকটি আফগান পোস্টকে লক্ষ্য করে। এরপর, রাত ১১টার দিকে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাকতিকা-কুরম সীমান্তে তৃতীয় আফগান সেনা পোস্টে হামলা চালায়।
জানা যাচ্ছে, খাইবার পাখতুনখোয়ার কুররাম জেলায় আফগান তালেবান এবং পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ব্যাপারে পাকিস্তান তাদের পুরনো বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেছে। পিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আফগান তালিবান এবং ফিতনা আল-খাওয়ারিজ কোনও উস্কানি ছাড়াই কুর্রামে গুলি চালিয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ণ শক্তির সঙ্গে জবাব দিয়েছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি ট্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং উভয় পক্ষই একে অপরের অবস্থান দখলের দাবি করেছে।
পূর্বে, সৌদি আরব এবং কাতারের হস্তক্ষেপের পর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটে। তবে, গতকালই, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সীমান্তে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে এবং যে কোনও সময় শত্রুতা শুরু হতে পারে। এর পরপরই মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষ শুরু হয়। সূত্রের ভিত্তিতে পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তানি আক্রমণে অনেক তালিবান পোস্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং তাদের পোস্ট থেকে আগুনের শিখা উঠতে দেখা গেছে।
#BREAKING: A perfect shot from Pakistani forces hit an Afghan Taliban tank position. pic.twitter.com/jJwE4u8RxH
— PakUrdu (@PakUrdu_) October 14, 2025
তালিবান পোস্ট দখলের দাবি
সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে, গুলিবর্ষণে একটি তালিবান ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়ে গেছে, যার ফলে আক্রমণকারীরা তাদের অবস্থান ত্যাগ করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, পাকিস্তানি বাহিনী সতর্ক রয়েছে এবং যেকোনও আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশের সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। এদিকে, আফগান-সমর্থিত একটি এক্স হ্যান্ডেল ভিন্ন দাবি করেছে। সাত পাকিস্তানি সেনা নিহতের দাবি করেছে আফগানিস্তানপন্থী একটি চ্যানেল। আফগানিস্তান ডিফেন্স জানিয়েছে, আফগান সেনারা পাকিস্তানের এমন স্থানগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে যা আফগানিস্তানের জন্য হুমকিস্বরূপ।
৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত
আফগানিস্তান ডিফেন্স দাবি করেছে, রাতের হামলায় ৭ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। আফগানিস্তান পাকিস্তানের কাছে আইএসআইএস-খোরাসান (দায়েশ) এর গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আফগানিস্তানের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে। ইসলামিক আমিরাতের একজন মুখপাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করেছেন, পাকিস্তান আইএসআইএসের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হস্তান্তর করবে। আইএসআইএস-খোরাসানের এই নেতাদের মধ্যে রয়েছেন শাহাব আল-মুহাজির, আব্দুল হাকিম তাওহিদি, সুলতান আজিজ এবং সালাহউদ্দিন রজব।
🏳️🚨 BIG BREAKING from Afghanistan
— Afghanistan Defense (@AFGDefense) October 14, 2025
"Afghanistan’s border forces have once again clashed with Pakistani troops along the Durand Line.
So far, seven Pakistani soldiers have been killed." pic.twitter.com/EkDdEfE3c5
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ তালিবান কমান্ডাররা
ইতিমধ্যে, আফগানিস্তানে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। টিটিপির দুটি অংশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের ঐক্য ঘোষণা করেছে। রিপোর্ট অনুসারে, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) তাদের দুটি অংশের ঐক্য ঘোষণা করেছে। একটির নেতৃত্বে আছেন কুর্রাম জেলার মুফতি আবদুর রহমান এবং অন্যটির নেতৃত্বে আছেন খাইবার জেলার তিরাহ উপত্যকার কমান্ডার শের খান। উভয় কমান্ডারই টিটিপি নেতা মুফতি নূর ওয়ালি মেহসুদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।
কেন আবার যুদ্ধের মুখে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান?
এই সংঘাতের মূল কারণ ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ (TTP)। ২০০৭ সালে গঠিত এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ, তারা চায় দেশটি ইসলামি শরিয়ত-ভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত হোক। যদিও TTP-র শক্তি একসময় কমে গিয়েছিল, আফগান তালেবান ২০২১ সালে কাবুল দখল করার পর তাদের প্রভাব আবার বেড়ে যায়। আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান সরকার ও TTP-র আদর্শ অনেকটাই এক। ফলে, ইসলামাবাদ যখন আফগান সীমান্তে TTP ঘাঁটি টার্গেট করে বিমান হামলা চালিয়েছে, তখন কাবুল তার কড়া বিরোধিতা করেছে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আফগান তালেবানকে অর্থ, আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছে। তাদের আশা ছিল— আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় এলে পাকিস্তান ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ পাবে, অর্থাৎ আফগান ভূখণ্ড ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত ভরসা হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উলটোটা। আফগান তালেবান এখন পাকিস্তানের হামলাকে 'সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন' বলে মনে করছে। দু’দেশের সীমান্তবর্তী খাইবার-পাখতুনখোয়ায় সাধারণ মানুষও পাকিস্তান সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। ফলে ইসলামাবাদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে জটিল।