সৈকত চক্রবর্তীগত সপ্তাহে ইতিহাস রচনা করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ারের পুত্র এখন নিউইয়র্কের মেয়র। মামদানির পাশাপাশি এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক বাঙালি। নাম সৈকত চক্রবর্তী। দক্ষিণ এশিয়ার এই ডেমোক্র্যাট মার্কিন রাজনীতিতে নয়া মাইলস্টোন তৈরি করতে পারেন। কীভাবে?
ন্যান্সি পেলোসি অবসর ঘোষণা করার পরই বড়সড় সুযোগ এসে গিয়েছে বাংলার ছেলে সৈকত চক্রবর্তীর কাছে। মার্কিন কংগ্রেসে স্যান ফ্রান্সিসকোর আসনটির জন্য ডেমোক্র্যাট পার্টির পক্ষ থেকে মনোনীত হতে পারেন তিনি, আশা এমনটাই।
জোহরান মামদানির মতো ৩৯ বছরের সৈকতও প্রগতিশীল তরুণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়। এক্স হ্যান্ডলে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয় নিয়েও বিশেষ বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। কেন এই জয় অনুপ্রেরণামূলক, তা-ও ব্যাখ্যা করেন বঙ্গতনয়। সৈকত বলেন, 'কত টাকা ওরা ছুড়ে মারছে তাতে আর কিছু যায় আসে না। সঠিক পরিবর্তনের জন্য যদি সংগঠিত ভাবে মানুষ লড়াই করে তবে সংগঠিত ভাবে দেখানো অর্থের লোভও কাজে আসে না।'
অনেকেই ইতিমধ্যেই মামদানির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন সৈকতের। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন এই বঙ্গতনয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় দু'জনের প্রচারে রয়েছে বড্ড মিল। মামদানির মতো তাঁরও অ্যাজেন্ডা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো এবং পরিকাঠামোগত সংস্কার।
ন্যান্সি পেলোসির বিরুদ্ধে গত এপ্রিল মাসে প্রচারে সৈকত বলেছিলেন,'শ্রমিক শ্রেণির পাশে দাঁড়ানোর জন্য যে লড়াই আন্দোলনের প্রয়োজন, তার সেরা সময় এটাই।' আগামী বছর আর ভোটে দাঁড়াতে চান না ন্যান্সি পেলোসি। ফলত ১৯৮৭ সালের পর থেকে অজেয় এই আসন এবার ছিনিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে সৈকত চক্রবর্তীর কাছে।
সম্পদ কর চালু করার বিষয়ে সরব হয়েছেন সৈকত। তাতে নিজের উপরও কর চাপাতে আপত্তি নেই তাঁর। চিরাচরিত ধাঁচে নয় বরং ডেমোক্র্যাট পার্টির খোলনলচে বদলে দেওয়ার শপথ নিয়েছেন তিনি। অনেকক্ষেত্রে তাঁর চাঁচাছোলা কথাবার্তা ডেমোক্র্যাট পার্টির পুরনো সদস্যদের উষ্মার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাঙালি অভিবাসী পরিবারে টেক্সাসে জন্ম সৈকত চক্রবর্তীর। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপিউটার সায়েন্সে স্নাতক পাশ করেছেন তিনি। এরপর চলে যান স্যান ফ্রান্সিসকোতে। সহ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শুরু করেন একটি স্টার্ট আপ। এরপর যোগ দেন ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি স্ট্রাইপে। ২০১৫ সালে প্রথম হাতেখড়ি হয় রাজনীতিতে। সেনেটর বার্নি সান্ডার্সের প্রচারে কাজ শুরু করেন। তবে জিততে পারেনি এই সেনেটর। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের চোখে পড়ে যান সৈকত। তৃণমূল স্তরের প্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছনোর জন্য ডিজিটাল মাধ্যমে তাঁর অভিনব উপায়ে ব্যবহার নজর কাড়ে সকলের। ২ বছর পর রাজনৈতিক দল 'জাস্টিস ডেমোক্র্যাট'-এর প্রতিষ্ঠা করেন সৈকত। দীর্ঘদিনের সদস্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তরুণ প্রার্থীদের সাহায্য করত বঙ্গতনয়ের এই দল। ২০১৮ সালে মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিরাট জয় পান অ্যালেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ। তাঁর প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন সৈকত। এরপরই অ্যালেকজান্দ্রিয়া নিজের চিফ অফ স্টাফ নিযুক্ত করেন বাংলার এই ছেলেকে। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
তবে ২০১৯ সালে একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সৈকত। সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি দেওয়া একটি টি-শার্ট পরায় মার্কিনিদের কাছে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। যদিও সৈকতের কথায় নেতাজি তাঁর কাছে গর্বের আর এক নাম।
বর্তমানে মার্কিন কংগ্রেসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৫ জন সদস্য রয়েছে। ৬ নম্বর হতে পারবেন সৈকত চক্রবর্তী? আমেরিকা বাংলার ছেলেকে চায় কি না, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছর জুন মাস পর্যন্ত।