বাংলাদেশের রাজনীতির এক নতুন অধ্যায় চলছে। দীর্ঘদিন ধরে সেদেশের রাজনীতির মঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়া দুই নেত্রী—বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা—বর্তমানে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে। আর এই সময়ে দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনূস।
খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা
গত ৮ জানুয়ারি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে পৌঁছন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ সাত বছর পর তিনি লন্ডনে ছেলে তারিক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন বলে বিএনপি দাবি করলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর পেছনে বড় কোনও রাজনৈতিক কৌশল কাজ করছে।
বিএনপির নেতৃত্ব এখন বিদেশে
লন্ডনে থাকা তারিক রহমান ২০০৮ সাল থেকে দল পরিচালনা করছেন। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এই দীর্ঘ প্রবাসী অবস্থান বাংলাদেশে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
শেখ হাসিনার ভারতে থাকা
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। মোহাম্মদ ইউনূস সরকার তার পাসপোর্ট বাতিল করেছে এবং দেশে ঢুকতে বাধা দিয়েছে।
মোহাম্মদ ইউনূসের শক্তি বৃদ্ধি
নোবেল বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ক্ষমতায় এসে তিনি তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেই নির্বাচন এখনও হয়নি। বরং তিনি জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন হতে পারে।
ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা সরকারের দায়ের করা সব মামলাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রত্যাহার করেছে। ফলে খালেদা জিয়ার এই বিদেশ যাত্রা অনেকের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সমর্থন
মোহাম্মদ ইউনূস সেনাবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার একটি বৈঠকের খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তবে এই বৈঠক থেকে কোনও চুক্তি হয়েছে কিনা, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
ভবিষ্যৎ রাজনীতি অনিশ্চিত
বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, একবার দেশের বাইরে গেলে নেতাদের জন্য রাজনীতিতে ফিরে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। ২০০৭ সালে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। এ কারণেই খালেদা জিয়ার দেশে ফিরে নেতৃত্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোহাম্মদ ইউনূস বর্তমান সময়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের একে একে সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান শক্ত করছেন। তবে তার এই পরিকল্পনা কতটা সফল হবে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন পথে যাবে, তা এখনও সময়ই বলে দেবে।