ব্রাজিলের মিনাস গেরাইস রাজ্যে এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৮ জন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে ভোর ৪টার দিকে, যখন সাও পাওলো থেকে যাত্রা করা একটি বাসের টায়ার ফেটে যাওয়ায় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের পরপরই বাসটিতে আগুন ধরে যায়, এবং বাসের যাত্রীদের অনেকেই জীবন্ত পুড়ে মারা যান।
ঘটনার বিবরণ
দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে ৪৫ জন যাত্রী ছিলেন। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, টায়ার ফেটে যাওয়ার পর বাসটি একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এর পরে, একটি ছোট গাড়ি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে। ছোট গাড়িটিতে থাকা তিনজন যাত্রী কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে যান। মিনাস গেরাইস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের সদস্যরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলটি হাইওয়ে BR-116-এর তেওফিলো ওটোনি এলাকায়। দুর্ঘটনার পরপরই বাসটি ধোঁয়া এবং আগুনে ছেয়ে যায়। উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পরের চিত্র
ঘটনার স্থান থেকে পাওয়া ছবি এবং ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ট্রাক বাসের পিষ্ট গাড়ির উপর বসানো অবস্থায় রয়েছে। বাসটি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। হতাহতদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে। মিনাস গেরাইস রাজ্যের গভর্নর রোমিউ জেমা এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, “ভুক্তভোগীদের সহায়তা এবং তাদের পরিবারকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
ব্রাজিলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
ব্রাজিলে সড়ক দুর্ঘটনা একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ২০২১ সালে, দেশটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় মৃত্যুর হার ছিল ১৫.৭, যা প্রতিবেশী আর্জেন্টিনার ৮.৮-এর তুলনায় অনেক বেশি। ব্রাজিল ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অর্ধেক কমানোর লক্ষ্য স্থির করেছে, যা ৮৬,০০০ জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা রাখে।
সড়ক নিরাপত্তা উন্নতির প্রয়োজন
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ব্রাজিলে বেশ কয়েকটি ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বরে এক বাস দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টায়ার এবং যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রাফিক নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং হাইওয়ে নিরাপত্তা উন্নত করার মাধ্যমে এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এখন সময় এসেছে ব্রাজিলের সড়ক নিরাপত্তার উন্নতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার, যাতে ভবিষ্যতে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আর না ঘটে।