Bangladesh China: বাংলাদেশ-নেপাল থেকে 'বউ' কিনছে চিন, চাকরির নামে নিয়ে গিয়ে যা করা হচ্ছে...

স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে 'বিয়ের প্রস্তাব' বা 'বিদেশি বউ' পাওয়ার বিজ্ঞাপন দেখলে সাবধান। কারণ এর পিছনে থাকতে পারে ভয়ানক মানব পাচারের ফাঁদ। রীতিমতো হুঁশিয়ারি জারি করেছে ঢাকার চিনা দূতাবাস।

Advertisement
বাংলাদেশ-নেপাল থেকে 'বউ' কিনছে চিন, চাকরির নামে নিয়ে গিয়ে যা করা হচ্ছে...

স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে 'বিয়ের প্রস্তাব' বা 'বিদেশি বউ' পাওয়ার বিজ্ঞাপন দেখলে সাবধান। কারণ এর পিছনে থাকতে পারে ভয়ানক মানব পাচারের ফাঁদ। রীতিমতো হুঁশিয়ারি জারি করেছে ঢাকার চিনা দূতাবাস। সাফ জানানো হয়েছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে অবৈধভাবে বিয়ে বা বউ কেনা মোটেও মেনে নেবে না চিনের প্রশাসন। তবুও, বেজিংয়ের নাকের ডগাতেই রমরমিয়ে চলছে বাংলাদেশ, নেপাল ও মায়ানমারের মতো দেশের মেয়েদের চাকরির প্রলোভনে পাচারের ব্যবসা।

চিনা রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে এই সতর্কবার্তা নিয়ে জোর প্রচার শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, 'ফরেন ওয়াইফে'র যে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে চিনের দীর্ঘদিনের এক সামাজিক সংকট। সেদেশের ভাষায় এর নাম 'shengnan shidai', অর্থাৎ 'অবিবাহিত পুরুষদের যুগ'। শুধু বাংলাদেশই নয়, নেপাল ও মায়ানমার থেকেও মহিলাদের পাচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে Human Rights Watch

নেপথ্যে কন্যাভ্রুণ হত্যা
চিনে বহু বছর ধরেই ছেলে-মেয়ের অনুপাত অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে ১৯৮০-র দশকে গর্ভপাত ব্যাপক আকার ধারণ করে। কন্যাভ্রুণ হত্যা চিনে বেশ প্রকট হয়ে ওঠে। এখন সেই প্রজন্ম মধ্যবয়সে পৌঁছেছে। আর সেই পাপের ফল এখন বেশ ভালই বোঝা যাচ্ছে। ২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে চিনে ৩ থেকে ৫ কোটি পুরুষ অবিবাহিতই থেকে যাবেন বলে শঙ্কা। এই চাপ সবচেয়ে বেশি চিনের গ্রামাঞ্চলে।

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সেখানে রাজনৈতিক মহল মহিলাদের বিয়ের বয়স কমানোর প্রস্তাব দিচ্ছেন। লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিং গাওয়ের মতে, 'এই চাহিদার জেরেই অবৈধ বিয়ে, এমনকি শিশু ও পাচার হওয়া মহিলাদের বিয়ের ঘটনাও বেড়ে চলেছে।'

চিনে বিদেশি পাত্রীদের চাহিদা বাড়ছে
ফলে বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোতে পাচারকারীরা ‘বউ শিকারে’ বেরোচ্ছে। Human Rights Watch-এর তথ্য বলছে, কেম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, নেপাল, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম থেকেও মহিলারা পাচার হচ্ছেন চিনে। বেশির ভাগই সমাজের প্রান্তিক অংশের মানুষ।

চিনে পরিবার ও বংশ রক্ষার তাগিদেই এমন অপরাধের জন্ম নিচ্ছে। ২০০০-এর দশকের শুরুতে প্রতি ১০০ কন্যাসন্তান পিছু জন্ম নিয়েছিল ১২১ জন পুত্রসন্তান। এই লিঙ্গ বৈষম্য এক নতুন ‘শ্যাডো ইন্ডাস্ট্রি’র জন্ম দিয়েছে।

চাকরির টোপ
চিনের পাচারকারীরা ‘চাকরি’ বা ‘ভালো ভবিষ্যৎ’-এর লোভ দেখিয়ে মহিলাদের ভিনদেশ থেকে নিয়ে আসছে। মেয়েদের বলা হয়, চিনে ভালো কাজ আছে। কিন্তু সেখানে পৌঁছেই তারা পাচারকারীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়, চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

Advertisement

অনেক সময় মহিলাদের ‘বিক্রি’ করে দেওয়া হয় ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার ডলারে। সেটা ‘বিয়ে’ হিসেবে দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে মহিলাদের সম্মতি থাকে না। গ্রামাঞ্চলের কোনও চাষির হাতে তুলে দেওয়া হয় পাত্রীকে। এরপর তাকে তালাবন্ধ করে রাখা, ধর্ষণ, সন্তান জন্ম দেওয়ার চাপ—এসবই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

২০১৯ সালের এক রিপোর্টে Human Rights Watch জানিয়েছে, উত্তর মায়ানমার থেকে বহু নারী এইভাবে পাচার হয়েছেন। এখন সেই চিত্র বাংলাদেশ ও নেপালেও দেখা যাচ্ছে। যারা পালাতে চেষ্টা করেন, তাদের চিনা প্রশাসন ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে দেখে এবং কঠোর শাস্তি দেয়।

ব্যবসা!
চিনের এই ধরনের 'ম্যাচমেকিং সার্ভিস' বা 'ম্যারেজ ট্যুর'-এর মাধ্যমে বিয়ে অনেকটাই ব্যবসা হয়ে উঠেছে। গ্রামের অবিবাহিত পুরুষদের কাছে “সস্তার বিদেশি বউ” পাওয়া যেন এক সুযোগ। এই পাচারকারীরা তাদের একাকিত্ব আর সামাজিক চাপে বিয়ে না-পাওয়ার ভয়কে কাজে লাগায়।

‘Give Us a Baby, and We’ll Let You Go’ নামের এক ১১২ পাতার রিপোর্টে এমন ৩৭ জন কাচিন মহিলার কথা বলা হয়েছে, যারা মায়ানমার থেকে পাচার হয়ে চিনে গিয়েছিলেন এবং কোনওভাবে পালিয়ে ফিরে এসেছেন। তাঁদের অভিযোগ, “চাকরি” দেওয়ার নামে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অনেককে ৩ থেকে ১৩ হাজার ডলারে কেনাবেচা করা হয়েছে।

তাঁদের কষ্টের কথা কেউ জানেন না...
এই মহিলাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্বিষহ সময়—ঘরবন্দি জীবন, বারবার ধর্ষণ, জোর করে সন্তান জন্ম দেওয়ার চাপ। তারা স্ত্রীর মর্যাদা পাননি, শুধুই গর্ভধারণের ‘যন্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

চিন সরকারের এই বিষয়ে জানা আছে। কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে কোনও বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কারণ, সমাজে এত বড় বৈষম্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গেলে প্রতিবাদের ঝড় উঠতে পারে। আইনে বলা আছে, বিয়ে-সংক্রান্ত সংস্থাগুলো বৈধ হলেও, তারা আন্তর্জাতিক বিয়ে করাতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে তার কোনও রক্ষা নেই।

POST A COMMENT
Advertisement