পাকিস্তান সফরে সৌদির আর্মি চিফহঠাৎ পাকিস্তান সফরে সৌদি আরবের আর্মি চিফ। এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যা সৌদি এবং পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে। সৌদি আরবের চিফ অফ জেনারেল স্টাফ, জেনারেল ফায়াদ বিন হামেদ আল-রাওয়াইলি, পাকিস্তানে পৌঁছেছেন। যা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের ব্যাপক আলোচনা চলছে।
মাস দুয়েক আগে কাতারের দোহায় ইজরায়েলের বিরুদ্ধে জোট বাঁধছে আরব ও ইসলামিক রাষ্ট্রগুলি। সেই জোটে থাকছে পাকিস্তানও। দোহায় ৪০টি আরব ও ইসলামিক দেশগুলির এমার্জেন্সি বৈঠকে হয়। তাতে সিদ্ধান্ত হয় ইউরোপ ও আমেরিকার NATO বাহিনীর স্টাইলে একটি বাহিনী তৈরি করার প্ল্যান করছে। কাতারের রাজধানীতে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। এবার কি তাহলে এই সম্পর্ককে আরও অগ্রসর করতে আচমকাই পাকিস্তান সফরে সৌদির আর্মি চিফ? এতো কীসের তোরজোর? বাড়ছে জল্পনা।
তিনি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেন। পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
উভয় দেশই সম্প্রতি স্বাক্ষরিত 'কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি'কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি কোনও একটি দেশ আক্রমণের শিকার হয়, তাহলে উভয় দেশ যৌথভাবে জবাব দেবে।
জেনারেল ফায়াদ রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গেওদেখা করেন। দুই নেতা বিশেষভাবে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টা আরও বাড়ানোর উপর জোর দেন।
জেনারেল ফায়াদের পাকিস্তান সফর কেবল একটি সরকারি সফর নয়, বরং একটি বৃহত্তর কৌশলগতভাবে পরিকল্পিত পরিকল্পনার অংশ। এটি ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের রাজনীতি এবং নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলবে। এই সফরটি এই অঞ্চলে কৌশলগত সম্পর্কের দ্রুত উদীয়মান নতুন মাত্রার ইঙ্গিতও দেয়।
সোমবার তাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়েছে বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই যুগে রিয়াদ এবং ইসলামাবাদ উভয়ই তাদের সম্পর্ককে নতুন উপায়ে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে।
ভারত এই ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, রিয়াদ দিল্লির সাথে তার অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং জ্বালানি নিয়ে সম্পর্ক মজবুত করেছে। এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা ঘনিষ্ঠতা ভারত-সৌদি সম্পর্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না, তবে ধীরে ধীরে আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে।
রিয়াদ-ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠতা ভারতে কী প্রভাব ফেলতে পারে?
১. সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা জোট হলে এই এলাকায় ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে যেতে পারে। রিয়াদের কৌশলগত অগ্রাধিকারও পরিবর্তিত হতে পারে। যদি পাকিস্তানের দিকে আরও মনোযোগ দেয়, তাহলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার গতি কমতে পারে।
২. গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা গতিশীলতা প্রভাবিত হতে পারে। সৌদি আরব ও পাকিস্তান যদি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা বৃদ্ধি করে, তাহলে ভারতকে তার নিরাপত্তা কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করতে হতে পারে।
৩. উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত ভূমিকা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ভারত উপসাগরীয় দেশগুলিতে তার নিরাপত্তা উপস্থিতি ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। রিয়াদ এবং ইসলামাবাদ যদি আরও ঘনিষ্ঠ হয়, তাহলে উপসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।
৪. ওআইসির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতেও পাকিস্তানের কণ্ঠস্বর আরও জোরদার হতে পারে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ফোরামে সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করতে পারে।
৫. উপসাগরীয় দেশগুলিতে বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসীরাও প্রভাবিত হতে পারেন, কারণ আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, উপসাগরীয় দেশগুলিতে কর্মরত ভারতীয়দের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
৬. ভারত-সৌদি অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। পাকিস্তান যদি সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়, তাহলে ভারতকেও তার সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে হবে, বিশেষ করে জ্বালানি, বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে।